পশ্চিমবঙ্গ

৯ দিন ধরে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার চিকিৎসক শুন্য, কালনা সংশোধনাগারের ১৫জন বন্দি সংক্রমিত, আতংক

FOCUS BENGAL

FOCUS BENGAL

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান জেলা জুড়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিদিন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুত্রুবার জেলায় নতুন করে ৫১২জন সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। আর এরই মধ্যে কালনা সংশোধনাগারের ১৫জন বন্দি করোনা সংক্রমিত হওয়ার খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এদিকে গত ৯দিন ধরে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার চিকিৎসক শুন্য হয়ে থাকায় আতঙ্ক ও উদ্বিগ্নতা ক্রমশই বাড়ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ সরকার আচমকাই মারা যান। 

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এরপর সংশোধনাগার থেকে লাগাতার চিকিৎসকের পদ পূরণ করার জন্য সরকারের কাছে লিখিতভাবে আবেদনও জানানো হয়। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত কোনো ডাক্তারই দায়িত্ব নেননি বলে জানা গেছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় জানিয়েছেন, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মেডিকেল অফিসার ডাঃ দেবাশীষ সরকার প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর জায়গায় চিকিৎসক চেয়ে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর চেষ্টা করছে সংশোধনাগারে চিকিৎসকের ব্যবস্থা করার। 

এদিকে, হু হু করে বাড়ছে করোনা। শুত্রুবারই গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৫২১ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এমতবস্থায় এখনও পর্যন্ত বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনগারে কেউ করোনা আক্রান্ত না হলেও কেউ যে আক্রান্ত হবেন না এমনটা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ফলে এই অবস্থায় চিকিৎসক না থাকায় সমস্যা বাড়ছে।

 যদিও এব্যাপারে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার স্বপন কুমার রায় জানিয়েছেন, চিকিৎসক না থাকার বিষয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছেন। এখনও কোনো চিকিৎসক আসেননি। জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বর দেবাশীষবাবুর সেরিব্রাল এ্যাটাক হয়। পরেরদিনই তিনি মারা যান। এমতবস্থায় চিকিৎসক শুন্য হয়ে পড়ে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। কোনো চিকিৎসক না থাকায় আসামীদের স্বাভাবিক চেকআপ নিয়েও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। 

এদিকে, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রে জানা গেছে, যে আসামীদের সংশোধনাগার থেকে বার করা হচ্ছে প্রতিদিন তাঁদের রেপিড টেষ্ট করেই সংশোধনাগারে ঢোকানো হচ্ছে। করোনা সংক্রান্ত সমস্তরকম সতর্কতাই তাঁরা নিয়েছেন। এদিকে, এরই মাঝে কালনা সংশোধনাগারে পনেরো জন বন্দি করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। আর এরপরই আতঙ্ক আরো বেড়েছে। 

জানা গেছে, কালনা সংশোধনাগারে ৭৪ জন বিচারাধীন বন্দি রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। তার মধ্যে ১৫জন বন্দির করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। জানা গেছে, প্রথমে এক বন্দির করোনা ধরা পড়ার পর বাকিদের অ্যান্টিজেন টেস্টের উদ্যোগ নেয় সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। আপাতত জেলের মধ্যেই বিশেষ হাসপাতাল খোলা হয়েছে। সেখানে একজন করে ডাক্তার ও নার্স রেখে বন্দিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

উল্লেখ্য, বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনগারের অধীনে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলার মোট ১৩টি সংশোধনাগার। বর্তমানে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি আসামি রয়েছে। অপরদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি ওমিক্রন নিয়েও গোটা জেলায় উদ্বেগ বাড়লেও এখনও জেলায় কোনো ওমিক্রন পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি সপ্তাহে কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

ফলে করোনা নিয়ে গোটা জেলা জুড়ে যখন রীতিমত আতংক তৈরী হয়েছে সেই সময় খোদ বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে চিকিৎসক না থাকায় আতংক আরও বাড়ল। বিশেষত, কোনো আসামী করোনা আক্রান্ত হলে তা জানার আগেই সংক্রমণ ছড়ানোর আশংকা তৈরী হয়েছে। যদিও সংশোধনাগারে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরী রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু তারপরেও আতংক বাড়ছেই।
Advertisement