অক্সিজেন সিলিন্ডারের আকাল, এরই মাঝে সিলিণ্ডারে অক্সিজেন ছাড়া অন্য গ্যাস যাচ্ছে না তো – আশংকার মেঘ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় মারা গেলেন সরকারী হিসাবে ৭জন। ক্রমশই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শনিবার জেলায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৮জন। আর এরমধ্যে কেবলমাত্র বর্ধমান শহরেই আক্রান্তের সংখ্যা ১৭০জন। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। যদিও করোনার প্রথম ঢেউয়ে যেভাবে পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তারা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন সাধারণ মানুষকে সহবত শেখানোর জন্য, ভোটের জন্য এবার আর সেভাবে কোথাও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা দিয়েছিল। এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়তে থাকায় আতঙ্কে মানুষ মাস্ক পরেই পথে নামছেন। প্রশাসনও মানুষ কে সচেতন করতে শুরু করেছে প্রচার।

এদিকে সংক্রমণের ব্যাপকতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তুঙ্গে উঠেছে অক্সিজেনের চাহিদা। ফলে অক্সিজেন সরবরাহকারী বিভিন্ন কারখানাগুলিতে চলছে দিনরাত জেগে কাজ। গত ১৭ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইণ্ড্রাষ্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিণ্ডার সরবরাহ। বর্ধমানের দেওয়ানদিঘীতে হাওড়া গ্যাসেস কোম্পানীর ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে গত মার্চ মাসেই। এখনও পুনর্নবীকরণ হয়নি করোনা জনিত কারণে। কিন্তু এখন মেয়াদউত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই জনহিতে কাজ করে যাচ্ছেন কোম্পানীর লোকজন। কোম্পানীর ম্যানেজার সন্ত কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, তাঁদের প্রায় ১২জন স্থায়ী কর্মী রয়েছে। সাধারণ সময়ে তাঁদের ২টি সিফটে কাজ হত। সারাদিনে ২০০ থেকে ২৫০ সিলিণ্ডারে অক্সিজেন বটলিং হত। তিনি জানিয়েছেন, করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাঁদের এখন ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ ডি-টাইপ সিলিণ্ডার বটলিং করতে হচ্ছে – যেগুলি নার্সিংহোম এবং হাসপাতালগুলিতেই সরবরাহ করা হচ্ছে।

সন্ত কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, চলতি এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখ থেকে অক্সিজেনের কাঁচামালের দাম ৩ থেকে ৫টাকা প্রতি কিউএম বাড়ানো হয়েছে। ফলে অক্সিজেন গ্যাসের দামও গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়ছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই অক্সিজেন নিয়ে একদিকে যেমন কালোবাজারির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। তেমনি যে সমস্ত সিলিণ্ডারে অক্সিজেন ভরা হচ্ছে তা কি আদৌ পরীক্ষা করেই ভরা হচ্ছে – এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

বর্ধমানের এক অক্সিজেন সরবরাহকারী জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সিলিণ্ডারে অক্সিজেন ভরার আগে এবং ভরার পর তা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কারণ এটা জীবনদায়ী। যদি কোনো কারণে নির্দিষ্ট পরিমাণের সামান্যতম অক্সিজেন গ্যাস ব্যতিত অন্য কোনো গ্যাস যেমন কার্বনডাই অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি থাকে তাহলে সেই গ্যাস রোগীর শরীরে গেলে তা মারাত্মক ক্ষতি- এমনকি মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। ওই ব্যবসায়ী আংশকা প্রকাশ করেছেন, চলতি পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের যোগান অব্যাহত রাখতে অনেকেই এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে সাধারণভাবে করোনায় মৃত্যু হয়েছে বলা হলেও ওই তথাকথিত অক্সিজেন গ্যাসের বদলে অন্য গ্যাসের প্রভাবে তিনি মারা গেলেন কিনা তানিয়ে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা।

যদিও হাওড়া গ্যাসেস কোম্পানীর ম্যানেজার জানিয়েছেন, তাঁদের একটি ল্যাবরেটরী আছে। শনিবার সেই ল্যাব যথারীতি বন্ধই ছিল। যদিও নিয়মানুযায়ী অক্সিজেন বটলিং প্ল্যান্টের ল্যাবরেটরিতে নূন্যতম ৫-৬জন পরীক্ষক থাকা আবশ্যক। সন্ত কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, যখন কাঁচামাল তথা লিক্যুইড অক্সিজেনের গাড়ি (ট্যাংকার) আসে তখন কেমিষ্ট, ফার্মাসিষ্টরা আসেন এবং ট্যাংকারের গ্যাস পরীক্ষা করেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বটলিং করে সেই গ্যাস যখন সিলিণ্ডারে ভরা হচ্ছে তখন কি সিলিণ্ডার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তাতে কত পরিমাণ অক্সিজেন সহ অন্যান্য গ্যাস রয়েছে? সন্ত কুমার পাণ্ডে জানিয়েছেন, তাঁরা সিলিণ্ডারে গ্যাস ভর্তির আগে সিলিণ্ডারকে সম্পূর্ণ ফাঁকা করে দেন যাতে অন্য গ্যাস না থাকে, তারপরই অক্সিজেন ভরা হয়।

যদিও শনিবার কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে সিলিণ্ডারে গ্যাস ভর্তির পর তা সিল করেই গাড়িতে তোলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোম্পানী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই সিলিণ্ডারে ৯৯ শতাংশেরও বেশি সম্পূর্ণ অক্সিজেন গ্যাসই সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত তিনি জানিয়েছেন, অক্সিজেন ছাড়া অন্য গ্যাস থাকার কোনো অভিযোগ এখনও তাঁদের কাছে আসেনি। এমনকি অক্সিজেনের এই চাহিদাকে মাথায় রেখে তাঁদের পুরনো বন্ধ থাকা কম্প্রেসার অক্সিজেন প্ল্যাণ্টকে ফের চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।