ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা এবার কলেজের অধ্যক্ষ অভিজিত মিত্রের দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারী কাজকর্মের প্রতিবাদে আমরণ অনশন শুরু করলেন। সোমবার বর্ধমানের ইউআইটিতে শিক্ষক ও অশিক্ষক সহ মোট ৬৪জন এই আন্দোলনে অংশ নিলেন। সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও তাঁরা দাবী জানালেন।
এদিন কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রীতম দে, অপর্ণা রায়, স্মিতা হাজরা, ড. সৌম্য দাস, ওএসডি অমিয় ঘোষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ইনচার্জ সন্দীপন নাথ ঠাকুর প্রমুখরা জানিয়েছেন, গত ৫ জানুয়ারী থেকে তাঁরা ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু করা, এনবিএ এক্রিডিয়েশন এবং এনআইআরএফ রেঙ্কিং-এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, পেনশন, পদোন্নতি এবং এআইসিটিই-এর এক্সটেনশন এফিলিয়েশনের জন্য তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। গত ৫দিন ধরে তাঁরা এই সমস্ত দাবীর পাশাপাশি কলেজ অধ্যক্ষের আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধেও রিলে অনশন করছিলেন। কিন্তু সোমবার থেকে তাঁরা শুরু করলেন আমরণ অনশন। এদিন এই আমরণ অনশন শুরু করলেন ওএসডি অমিয় ঘোষ এবং সহকারী অধ্যাপক প্রীতম দে।
এদিন আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, গত প্রায় ১ বছর ২ মাস ধরে তাঁরা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্টার সহ অন্যান্য আধিকারিকদের কাছে তাঁদের লিখিত দাবী ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু এই ধরণের আর্থিক দুর্নীতির জন্য যে ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত ছিল তা না করে একটি এথিকস কমিটি গঠন করে কার্যত কর্তৃপক্ষ দায় সেরেছেন। অথচ মৌখিকভাবে উপাচার্য তাঁদের জানিয়েছিলেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাঁর অফিস সিল করা হবে। কিন্তু উপাচার্য্যের বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এখনও অধ্যক্ষ অভিজিত মিত্র স্বপদেই বহাল রয়েছেন তাই নয়, বর্তমানে তিনি কলেজেও আসছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত কোয়ার্টারে থেকেই কলেজের কাজকর্ম পরিচালনা করছেন। এমনকি রীতিমত তীব্রতর চাপ দেওয়া হচ্ছে অফিসের স্টাফদের। আর এই চাপ সহ্য করতে না পেরেই এদিন কলেজের একাউণ্ট অফিসার কমলকৃষ্ণ দাস গুরুতর অসুস্থও হয়ে পড়েন। তাঁকে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
কলেজের অধ্যাপকরা অভিযোগ করেছেন, এখনও তাঁদের ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালুই হয়নি অথচ দীর্ঘদিন ধরেই কলেজ অধ্যক্ষ তাঁর বর্ধিত অধ্যক্ষ ভাতা নিয়ে আসছেন। যা রীতিমত আর্থিক দুর্নীতি। এদিন অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, এই কলেজ অধ্যক্ষ উপাচার্যের সঙ্গে মিলিতভাবে ইউআইটিকে বেসরকারীকরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। অথচ তিনি সংবাদ মাধ্যমে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন তিনি বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে। তাঁর এই মুখোশ ইতিমধ্যে খুলে পড়েছে। এদিন সন্দীপন নাথ ঠাকুর জানিয়েছেন, ২০২০-র ১৬ মার্চ ইউআইটির কর্মী, প্রফেসরদের কি স্ট্যাটাস তা জানতে তাঁরা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। যদিও এই মামলার নির্দিষ্ট তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেউ আদালতে হাজির হয়নি।
রীতিমত ক্ষুব্ধ কলেজের প্রফেসর জানিয়েছেন, কোভিড ইস্যুতে যখন গোটা রাজ্যের ছোট বড় স্কুলও অনলাইন পড়াশোনার পরিকাঠামো তৈরী করে পড়াশোনা চালু করে দিয়েছে সেখানে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এই সংক্রান্ত কোনো পরিকাঠামোই তৈরী করা হয়নি। কেবলমাত্র অধ্যক্ষের চুড়ান্ত স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্যই ২টি পোষ্ট গ্রাজুয়েট কোর্স সহ ৬টি বিভাগের প্রায় ১৫০০ ছাত্রছাত্রী সংকটের মুখে পড়েছেন। এদিকে, এব্যাপারে ইউআইটি কলেজের অধ্যক্ষ অভিজিত মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।