আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারী রাজ্য জুড়ে বিদ্যুত ঠিকাকর্মীদের কর্মবিরতির ডাক, পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারী গোটা রাজ্য জুড়ে ভয়াবহভাবে বিদ্যুত পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখ দিলো। শনিবার 

বর্ধমানে রাজ্য বিদ্যুত বন্টন সংস্থায় কর্মরত ১৩ ধরণের কাজের সঙ্গে যুক্ত চুক্তিভিত্তিক ও ঠিকাকর্মী ঐক্য মঞ্চের সাংবাদিক বৈঠকে এমন সম্ভাবনাই ব্যক্ত করলেন সংগঠনের নেতৃত্বরা। রীতিমত রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এদিন এই ঐক্য মঞ্চের রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক সোমনাথ চ্যাটার্জ্জী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ দপ্তরের ১৩ ধরণের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা তাঁদের ন্যূনতম দাবীদাওয়া আদায়ের জন্য ২০০৭ সাল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। সামান্য কিছু দাবী পূরণ হলেও দাবীর বৃহদংশই এখনও পূরণ হয়নি।

তিনি জানিয়েছেন, অথচ ঝড়, বৃষ্টি, প্রাকৃতিক বিপর্যয় সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁরাই গোটা রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে পরিশ্রম করে চলেছেন। অথচ সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ সমকাজে সমবেতন সহ শ্রম দপ্তরের নির্দেশকেও উপেক্ষা করে চলেছেন রাজ্য সরকার। তাঁরা গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে তাঁরা লাগাতার কলকাতার বিধাননগররের বিদ্যুত দপ্তরের মানব সম্পদ দপ্তরে তাঁদের স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন। এমনকি শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ওপর রাজ্য সরকার পুলিশ লেলিয়ে তাঁদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছেন। তাঁদের শতাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। প্রায় অর্ধ শতাধিক কর্মীকে মিথ্যা বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

সোমনাথবাবু জানিয়েছেন, শুধু এটাই নয়, এতকিছুর পরও খোদ রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করার বা আলোচনা করার ন্যূনতম সৌজন্যতা দেখাননি। উল্টে তিনি সংবাদ মাধ্যমে সম্পূর্ণ মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তিনি নাকি আলোচনায় বসতে চেয়েছিলেন কিন্তু ঠিকাকর্মীরাই চাননি। সোমনাথবাবু জানিয়েছেন, এটা বিদ্যুৎমন্ত্রীর সর্বৈব মিথ্যা প্রচার। এমনকি তিনি এই ঠিকাকর্মীদের যাঁরা গোটা রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ পরিষেবাকে সচল রেখেছেন, তাঁদের মানুষ হিসাবে গণ্যই করেন না। সোমনাথবাবু এদিন জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যে তাঁদের এই ঐক্যমঞ্চে সামিল হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার কর্মী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ২ ও ৩ তারিখ কর্মবিরতির জেরে গোটা রাজ্য জুড়েই যদি বিদ্যুত বিপর্যয় নেমে আসে তাঁর দায় সম্পূর্ণভাবে চাপানো হয়েছে বিদ্যুত বণ্টন বিভাগের ওপরই।

তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই কর্মবিরতি ভাঙতে তাঁদের নানাভাবে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। যদিও তাকে তাঁরা পাত্তাই দিচ্ছেন না। নিজেদের আন্দোলনে অনড় রয়েছেন। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে হাজির থাকা মণিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মাসে ন্যূনতম ২১ হাজার ৬০০টাকা বেতন, নির্মাণ শ্রমিকের পরিবর্তে বিদ্যুত শ্রমিকের স্বীকৃতি প্রদান করা, ৬০ বছর পর্যন্ত কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা, ঘরভাড়া সহ অন্যান্য ভাতা প্রদান করা, কোনো ক্ষেত্রেই কর্মী ছাঁটাই না করা, ২০০৭ সালের এলওএ অনুযায়ী ২০শতাংশ চুক্তিভিত্তিক কর্মীর মধ্যে থেকে শূন্য পদে নিয়োগ করা এবং স্মার্ট মিটার লাগানোর আগে এটিপি, রিডারদের কাজের নিশ্চয়তা প্রদান করা প্রভৃতি দাবী জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং বিমাতৃসুলভ আচরণ তাঁদের রীতিমত হতাশ করেছে। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা দুদিন ব্যাপী এই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বক্তারা রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আশাকর্মী থেকে আইসিডিএস কর্মী সমস্ত শ্রেণীর মানুষের কথা ভেবে তাঁদের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। কিন্তু তাঁরাই কেবল বঞ্চিত থেকে গেছেন। তাঁদের কথা যাতে মুখ্যমন্ত্রী দ্রুততার সঙ্গে ভাবেন সেই আশা নিয়েই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই নবান্নে ই-মেইল করেছেন। কিন্তু তারপরেও তাঁদের কথা ভাবা হয়নি। উল্লেখ্য, এই কর্মবিরতির মধ্যে রয়েছেন বিদ্যুতের লাইন ম্যানরাও। যাঁরা কার্যতই দ্রুততার সঙ্গে বিদ্যুত পরিষেবাকে ঠিক করার কাজে নিয়োজিত থাকেন। ফলে আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারী গোটা রাজ্য জুড়েই এই কর্মবিরতির ব্যাপক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এজন্য আন্দোলনকারীরা সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। এদিনই কার্জন গেটের সামনে তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভও করেছেন।

Recent Posts