বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন ড. দেবাশীষ নাগ। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জেলা পরিষদের সদস্যরা। খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের দলের কো-অর্ডিনেটর দেবু টুডু জানিয়েছেন, এব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। অন্যদিকে, খোদ দলের জেলা সভাপতি রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, এখনও তিনি এই বিষয় নিয়ে কিছু শোনেন নি।
অন্যদিকে, খোদ জেলা পরিষদ সূত্রেই জানা গেছে, এদিন নিয়মমাফিক দেবাশীষবাবু জেলা পরিষদের আসেন। দুপুরের দিকে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দেন। এমনকি এব্যাপার নিয়ে জেলা পরিষদের কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনাও করেন। কেন তিনি ইস্তফা দিতে চলেছেন সে ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভের বিষয়ও তুলে ধরেন। কিন্তু যাঁদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেন, তাঁরা গোটা বিষয়টি নিয়ে দলের সভাপতি স্বপন দেবনাথের সঙ্গে তাঁকে আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শও দেন। কিন্তু কার্যত অনড় দেবাশীষবাবু শেষ পর্যন্ত জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ পদ থেকে লিখিতভাবে জেলাশাসকের উদ্দেশ্যে ইস্তফা দেন।
যদিও বারবার দেবাশীষবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোনের সুইচ বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। অপরদিকে, তাঁর ঘনিষ্টমহল সূত্রে জানা গেছে, ইদানীংকালে দলের একাংশের সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না। তা নিয়ে তিনি দলের জেলা সভাপতির কাছে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। কিন্তু কার্যত তাঁর সেই ক্ষোভের তিনি কোনো মূল্য পাননি। দলের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁকে অন্ধকারে রাখা হচ্ছিল বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন। এমনকি শোনা যাচ্ছে তিনি দলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কাছেও তাঁর এই দলের মর্যাদা না পাওয়ার ক্ষোভ জানিয়ে তিনি ইস্তফাপত্র দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাননি।
তাই শেষ পর্যন্ত এদিন জেলা পরিষদে এসেই তিনি ইস্তফার পথেই পা বাড়ান। আর এদিন এই ইস্তফাপত্র দিয়েই তিনি সটান বাড়ি চলে যান। এদিকে, দেবাশীষবাবুর এই ইস্তফা প্রদানের বিষয় নিয়ে খোদ জেলা পরিষদের অন্দরেই শুরু হয়েছে চাপান উতোর। জানা গেছে, পূর্বস্থলী ২-এর ৪০ নং জেলা পরিষদ আসন থেকে নির্বাচিত হন ড. দেবাশীষ নাগ। একদা শিক্ষক এবং বর্ধমান জেলা প্রাথমিক স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ সামলে আসা দেবাশীষবাবুকে জেলাপরিষদ আসনে টিকিট দেওয়া হয়। জেতার পর তাঁর পাণ্ডিত্য এবং সমাজসেবা মূলক কাজের জন্যই তাঁকে জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়।
উল্লেখ্য, আর্সেনিক সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দেবাশীষবাবুর লেখা বই গোটা রাজ্য জুড়ে প্রশংসিত হয়। আর আচমকাই দলের কাছ থেকে সমীচীন সম্মান না পাওয়ার ক্ষোভে তাঁর এই ইস্তফা দেবার ঘটনায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এদিন। কারণ চলতি সময়ে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগিয়ে যেতে পিকে টীমের ওপর ভরসা করেছে। যার অঙ্গ হিসাবে একাধিক জনমুখী কর্মসূচী গ্রহণ করে জনতার সঙ্গে নেতাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর ঠিক সেই মুহূর্তে দেবাশীষবাবুর এই পদত্যাগ দলের পক্ষে রীতিমত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ালো। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই দেবাশীষবাবুর অনুগামী প্রায় ১৫জন গ্রাম ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের নেতারাও তাঁর সঙ্গে সামিল হয়েছেন দলীয় এই বঞ্চনার জন্য।