আচমকা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ রোগী, চাঞ্চল্য

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রাধারাণী ওয়ার্ড থেকে নিতাই সোরেন (৪৫) নামে মেমারী থানার বাসিপুর কাঁটাডাঙা গ্রামের এক রোগী নিখোঁজ হয়ে যাবার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ালো। নিখোঁজ নিতাই সোরেনের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতিই দায়ী এই ঘটনায়।
নিতাই সোরেনের মেয়ে সরস্বতী সোরেন জানিয়েছেন, আচমকাই তাঁর বাবার খিচুনি শুরু হয়। এই ঘটনায় তাঁরা গত ১৯ ফেব্রুয়ারী নিতাইবাবুকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাঁকে রাধারাণী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চলছিল তাঁর চিকিৎসাও। চিকিৎসকের কথামত ২১ ফেব্রুয়ারী তাঁর সিটি স্ক্যান করানোর জন্য অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাবার জন্য নির্দেশ দেন চিকিৎসকরা।
সরস্বতীদেবী জানিয়েছেন, তাঁর বাবাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অনাময়ে নিয়ে যাবার জন্য তিনি বিনামূল্যে হাসপাতালের গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে যান। সেই সময় তাঁর বাবার পাশের বেডের একজনকে তাঁর বাবাকে দেখতেও বলে যান। সরস্বতীদেবী জানিয়েছেন, তাঁর বাবা মাঝে মাঝেই ভুল বকছিলেন। সেইজন্যই চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন। তিনি জানিয়েছেন, দুপুর প্রায় দেড়টা নাগাদ তিনি ওয়ার্ডে ফিরে এসে দেখেন তাঁর বাবা নেই। এরপর তিনি খোঁজখবর শুরু করেন। কিন্তু আজও তাঁর বাবাকে ফিরে পাননি।
এব্যাপারে ২১ ফেব্রুয়ারীই তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। একইসঙ্গে ওইদিন রাতেই তিনি বর্ধমান থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রীও করেন। কিন্তু কিভাবে তাঁর বাবা নিরাপত্তায় মোড়া হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলেন সে ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার সরস্বতী দেবী জানিয়েছেন, এদিন তাঁদের হাসপাতালে ডাকা হয় সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর জন্য। কিন্তু সেখানেও তিনি তাঁর বাবাকে দেখতে পাননি।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে দফায় দফায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরদার করা হয়েছে। কার্যত গোটা হাসপাতালকে সিসিটিভিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে। জেলা পুলিশ ছাড়াও নিয়োগ করা হয়েছে প্রচুর সংখ্যক বেসরকারী নিরাপত্তাকর্মী। বেসরকারী নিরাপত্তাকর্মীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। তারপরেও আস্ত একজন রোগী হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে কিভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল তা নিয়ে রীতিমত সরব হয়েছেন নিতাই সোরেনের পরিবারের লোকজন।
যদিও এব্যাপারে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, কিভাবে ওই রোগী নিখোঁজ হয়েছেন সে ব্যাপারে তাঁরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন। একইসঙ্গে এব্যাপারে বর্ধমান থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তবে এব্যাপারে রোগীপক্ষের মধ্যে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে।
তিনি এদিন রোগীর পরিবারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, যখন রোগীপক্ষ জানেন তাঁদের রোগী অস্থির ও চঞ্চল হয়ে উঠেছিলেন সেই সময় বাড়ির কোনো লোকজন ছাড়া তাঁকে একা রেখে যাওয়া উচিত হয়নি। এরই পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেছেন, কোথাও একটা কো-অর্ডিনেশনের অভাব থাকতে পারে। সে ব্যাপারেও তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

Recent Posts