আমফানের ত্রাণে কেন্দ্রের আর্থিক বরাদ্দের এক তৃতীয়াংশই তো প্রয়োজন পূর্ব বর্ধমান জেলায়! বাকি রাজ্যের কি হবে? জোর চর্চা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: আমফানের তাণ্ডবে গোটা রাজ্যের ৭টি জেলা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। শুক্রবারই রাজ্যের আমফানে বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তারপরেই তিনি আমফানের ক্ষতির জন্য রাজ্যকে আপৎকালীন ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। কিন্তু এরপরই প্রধানমন্ত্রীর এই আর্থিক ত্রাণ নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের শাসকদল থেকে বিরোধী কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও।
খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমফানের প্রভাবে যে ক্ষতি হয়েছে তা ১ লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি। এদিকে, খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী যে আর্থিক ত্রাণ বরাদ্দ করেছেন ১ হাজার কোটি টাকার – তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ টাকার ক্ষতি হল ৭ জেলার বাইরে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যর যে ৭ জেলায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে এই সামান্য আর্থিক প্যাকেজে কি হবে – তা নিয়েই রীতিমত প্রশ্নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় কার্যত ক্ষোভ সৃষ্টি হতে শুরু করেছে।
শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সমস্ত দপ্তরকে নিয়ে ম্যারাথন বৈঠকের পর জেলাশাসক জানিয়েছেন, এই জেলায় এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র ফসল ও কাঁচাবাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে তার প্রাথমিক রিপোর্টে প্রায় ৩১৪ কোটি টাকার কাছাকাছি। এখনও সমস্ত ব্লক থেকে পুরোপুরি ক্ষতির হিসাব এসে পৌঁছায় নি। জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রতিটি ব্লক থেকে প্রশাসনিক ভাবে যে রিপোর্ট আসছে তারই পাশাপাশি পুলিশকে জাননো হয়েছে গ্রামীণ এলাকায় নিযুক্ত থাকা সিভিক ভলেণ্টিয়ারদের কাছ থেকেও একটি কমপাইল রিপোর্ট সংগ্রহ করার। সব মিলিয়েই সেই রিপোর্ট আজ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তুলে ধরেছেন জেলাশাসক।
শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে এই জেলায় বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে মোট ১৭৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩২৪টি মৌজার ৪২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার মধ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ভাতার ব্লকের ১৪টি পঞ্চায়েত, মন্তেশ্বরের ১৩টি পঞ্চায়েত, মঙ্গলকোটের ১২টি পঞ্চায়েত, মেমারী১ ও পূর্বস্থল ২ এর ১০টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। এছাড়াও তিল চাষে ক্ষতি হয়েছে জেলার মোট ১৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২৫২টি মৌজার ১৮ হাজার ৮০৮ হেক্টর এলাকা। সব্জির ক্ষতি হয়েছে জেলার ১৮০টি গ্রাম পঞ্চয়েতের ১ হাজার ২২২ মৌজার ৫ হাজার হেক্টর এলাকা। বাদাম চাষে ক্ষতি হয়েছে জেলার জামালপুর ব্লকের ২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯টি মৌজার ৫০ হেক্টর এলাকা। এছাড়াও পাট চাষে ক্ষতি হয়েছে জেলার ৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০৫টি মৌজার ৬ হাজার ৭৬৪ হেক্টর এলাকা।
এর মধ্যে রয়েছে পূর্বস্থলী ২ এর ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯০টি মৌজা এবং কালনা ১ ব্লকের ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩০টি মৌজা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। মুগডাল চাষে ক্ষতি হয়েছে জেলার ৪৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৩০টি মৌজার২২৫ হেক্টর এলাকা। ভূট্টা জাতীয় ফসলে ক্ষতি হয়েছে ৩৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০৮টি মৌজার ২৮ হেক্টর এলাকা। এছাড়াও ফল চাষে ক্ষতি হয়েছে জেলার ৫৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০৬টি মৌজার ১৪০৫ হেক্টর এলাকা এবং আখ চাষে ক্ষতি হয়েছে জেলার ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৬টি মৌজার ৮৩ হেক্টর এলাকা।
শুক্রবারই রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়েই বিভিন্ন রকমের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এব্যাপারে প্রতিটি জনপ্রতিনিধিদের একেবারে গ্রামে গ্রামে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে তার রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন তিনি। যাতে কোথাও কেউ বঞ্চিত না থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই জেলা প্রশাসনের আশংকা, সামগ্রিকভাবে গোটা জেলার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩৫০ কোটিও ছাপিয়ে যেতে পারে। যা প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক ত্রাণের এক তৃতীয়াংশ।
ফলে কেবলমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলায় যদি এই ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ৭টি জেলা সহ অন্যান্য জেলার ক্ষতির মোট পরিমাণ কত হতে পারে – তা নিয়েই চলছে চাপান উতোর। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই আর্থিক প্যাকেজ আদপেই কতটা ক্ষতির ওপর মলম লাগাতে পারবে তা নিয়েই চলছে জোর কল্পনা।

Recent Posts