ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, হোয়াইট ফাঙ্গাসের পর এবার গাছের ওপর এমনকি কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ওপরও থাবা মারতে শুরু করে দিল সাইটেলিটিয়াম ডিমিট্রিয়ারাম নামে এক ছত্রাক। সাম্প্রতিক সময়ে পুর্ব বর্ধমান জেলার জিটি রোডের দুপাশে থাকা অসংখ্য বিশেষত শিরিষ গাছ শুকিয়ে মরে যাওয়ার ঘটনায় গোটা জেলা জুড়েই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এরই মাঝে খোদ বর্ধমান শহরের ঐতিহ্যবাহী বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত পাল বর্ধমান থানায় কেন গাছ মারা যাচ্ছে তার তদন্ত চেয়ে আবেদন জানানোয় বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসনও।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে গোটা জেলা জুড়েই বিশালাকার শিরিষ গাছ আচমকাই শুকিয়ে মারা যেতে শুরু করে। গত বছর বর্ধমানের তেলিপুকুর এলাকা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এভাবে শিরিষ গাছ মারা যাওয়ায় এর পিছনে কাঠ পাচারকারীদের হাত আছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। যা নিয়ে শুরু হয় হৈচৈ। কিন্তু দেখা গেছে, এরই পাশাপাশি বর্ধমানের মেমারী থানা এলাকার রসুলপুর থেকে প্রায় হুগলীর সীমানা পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে থাকা এই শিরিষ গাছ আচমকাই শুকিয়ে মারা যেতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবাও শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে বর্ধমানের বিশিষ্ট উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ দীপাঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, এটি একটি ছত্রাক ঘটিত রোগ। যার নাম সাইটেলিটিয়াম ডিমিট্রিয়ারাম। এই ছত্রাকের বিষয় প্রথম নজরে আসে মধ্য প্রাচ্যের ওমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রিপোর্টে। জানা যায়, সেখানে এভাবে গাছ মরে যাওয়ার পিছনে এই ছত্রাককে দায়ী করা হয়। এরপর ২০১৪/২০১৫ সাল নাগাদ পাঞ্জাব, কেরালা সহ উত্তর ভারতেও এই রোগ দেখা যায়। তবে শুধু শিরিষ গাছই নয়, বট, গুলমোহর,পরশপিপল প্রভৃতি প্রায় ৮ ধরণের গাছে হামলা চালিয়েছে এই ছত্রাক। যে সমস্ত গাছ পুর্ণ বয়স্ক এবং কিছুটা দুর্বল তাদের ওপরই এই আক্রমণ হয়েছে। আক্রমণের ফলে গাছের ডগা থেকে নীচে পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য এই ছত্রাকের আক্রমণ শুরু হতেই পলিপোর ফাঙ্গাসও সেখানে আক্রমণ চালিয়েছে। ফলে গোটা গাছটাই একেবারে ছাতুর মত গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। ফলে কাঠও কাজে লাগছে না। এমনকি বিপজ্জনকও হয়ে পড়ছে। যেকোনো মুহুর্তেই ভেঙে পড়তে পারে সেই গাছ। তিনি জানিয়েছেন, শুধু যে এই ছত্রাক গাছের ওপরই হামলা চালায় তা নয়, দেখা গেছে চা শ্রমিকদের ওপরও হামলা চালায় এই ছত্রাক। এর প্রভাবে হাত ও পায়ের নখ পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আসাম, নীলিগিরি এলাকায় এই ছত্রাকের আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
তিনি জানিয়েছেন, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আক্রমনের শুরুতেই প্রতিষেধক ব্যবহার করা এবং গাছ লাগানোর সময় কাটিং গাছের পরিবর্তে বীজ থেকে উৎপন্ন গাছই লাগানোর ওপর জোড় দেওয়া প্রয়োজন। কারন বীজ থেকে তৈরী হওয়া গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। এদিকে এ ব্যাপারে জেলা বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী জানিয়েছেন, তাঁর কাছে এই বিষয়ে খবর এসেছে। তাঁরা খতিয়ে দেখছে।
ছবি – ইন্টারনেট