এবার বর্ধমান শহরে করোনা পজিটিভ মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী, সিল করা হল এলাকা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: সোমবারই পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী আশা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, গত ১৪ দিনে জেলায় নতুন করে কোনো করোনা আক্রান্তের কেস না হওয়ায় অরেঞ্জ জোন থেকে গ্রীন জোন হওয়া টা কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সোমবার রাতেই খোদ বর্ধমান শহরে হাওড়া থেকে তিনদিন আগে আসা এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ায় সেই আশায় জল ঢেলে দিল বলেই মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ থেকে অধিকাংশ জেলাবাসী।
আক্রান্ত মহিলা হাওড়ার একটি মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী বলে মঙ্গলবার জেলাশাসক সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন। এনিয়ে জেলায় মোট ৩জনের পজিটিভ পাওয়া গেল। উল্লেখ্য, খণ্ডঘোষের একই পরিবারের কাকা ও ভাইঝির দুজনের পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পর নতুন করে আর কোনো পজিটিভ কেস না মেলায় কার্যতই সোমবার পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ছিলেন রীতিমত স্বস্তিতে। এমনকি নতুন করে কোনো পজিটিভ কেস না হওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলাকে অরেঞ্জ জোন থেকে গ্রীন জোনে নিয়ে যাবার বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে জেলা থেকে প্রয়োজনীয় রিপোর্টও পাঠানো হয়েছিল বলে সোমবার জানিয়েছিলেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী।
সোমবার তিনি জানিয়েছিলেন, পূর্ব বর্ধমান জেলাকে গ্রীণ জোনের ঘোষণা যে কোনো মুহূর্তেই হতে পারে। কার্যত, জেলাশাসকের এই ঘোষণার কয়েকঘণ্টা পরেই ফের আতংক ছেয়ে গেল শহর জুড়ে। বর্ধমান শহরের সুভাষপল্লী বাসিন্দা ওই মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর সোয়াব পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেল সোমবার রাতেই। আর এরপরেই সমগ্র সুভাষপল্লী এলাকাকেই সোমবার রাত থেকে কন্টেনমেণ্ট হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সুভাষপল্লীর সমস্ত রাস্তাই পুলিশের পক্ষ থেকে সিল করে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার সকালে এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. প্রণব রায় প্রমুখরা। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ি থেকে কোনো ভাবেই বের হওয়া যাবে না। তাঁদের যা প্রয়োজন পুলিশ কর্মীদের জানালে তাঁরাই তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবেন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এদিন থেকেই নিয়মিত ড্রোন দিয়ে এই এলাকায় নজরদারী চালানো হবে – কেউ বাড়িতে থেকে বের হচ্ছেন কিনা, জমায়েত করছেন কিনা – তা দেখার জন্য।
অন্যদিকে, জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত ওই মহিলা নিজেই সোমবার সন্ধ্যায় অসুস্থতা বোধ করায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে আসেন। তার নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ মেলে। তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নাইসেডে তা পাঠানো হলে নাইসেড থেকে রাতেই জানিয়ে দেওয়া হয় তিনি করোনা আক্রান্ত। এরপরই তাঁকে প্রথমে বর্ধমানের কোভিড হাসপাতাল এবং মঙ্গলবার সকালে তাঁকে দুর্গাপুরের সনকা কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
একইসঙ্গে তাঁর পরিবারের স্বামী, দুই ছেলে ও শাশুড়ী মোট ৪জন সদস্যকে সোমবার রাতেই বর্ধমানের ক্যামরি কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদেরও নমুনা সংগ্রহ করে আগামীকাল পরীক্ষা করা হবে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, আক্রান্ত ওই মহিলার স্বামী বর্ধমানের বিদ্যুত দপ্তরে চাকরি করেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সঙ্গে গত তিনদিনে কারা কারা যোগাযোগ বা সংস্পর্শে এসেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজন গাড়ি চালক সহ মোট ৪ জনকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কোয়ারেণ্টাইন সেণ্টারে পাঠানো হবে।
এদিকে এই ঘটনার পরই বর্ধমান বিদ্যুত দপ্তরের প্রশাসনিক ভবন সহ সেক্টর ২, ৩ ও ৪কে আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। বিদ্যুত দপ্তরের সমস্ত অফিসকে এদিন থেকেই স্যানিটাইজ করার কাজ শুরু করা হবে বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক। যদিও শহরের বিদ্যুৎ পরিষেবা কোনো ভাবেই ব্যাহত হবেনা বলেই জানিয়েছেন জেলাশাসক।

Recent Posts