ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: রাজনৈতিক দলেরই হোক কিংবা আদিবাসী সংগঠনের কোন বিক্ষোভ কর্মসূচি, কিংবা যেকোনো ভোটের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র পেশ – পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তৎপরতা থাকে নজরকাড়া। কোনোভাবে যাতে আইনশৃঙ্খলা জনিত অবনতি না ঘটে তার জন্য যেমন ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়, তেমনি বড় কোনো মিছিল বা জমায়েত কে প্রতিরোধ করতে গার্ড রেল ও বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে গুরুত্বপূর্ন রাস্তা কিংবা কোনো বিশেষ স্থানকে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তবুও বিক্ষোভকারীরা কখনো কখনো পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ও টপকে চলে আসে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে। কয়েকমাস আগেই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ডাকে একটি বিক্ষোভ কর্মসুচিতে জেলা পুলিশের তৈরি করা বাঁশ ও রেল গার্ড দিয়ে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় রীতিমত ভেঙে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আর তাই এবার সংগঠিত বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে অভিনব সম্পূর্ন লোহার তৈরি উঁচু ব্যারিকেড নিয়ে এলো বর্ধমান থানার পুলিশ।
প্রায় ৮ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট, নীল রং করা, একদিক সম্পূর্ন লোহার পাত দিয়ে আটকানো ও অন্যদিকে এই ব্যারিকেডের উপরে ওঠার জন্য দুটো ধাপে লোহার পাত লাগানো ত্রিভুজাকৃতির এই শক্তপোক্ত ব্যারিকেডই এবার বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশের নয়া ঢাল হতে চলেছে বলে মনে করছেন পুলিশ মহলেরই একাংশ। অনেকেই মনে করছেন, এই অভিনব ব্যারিকেডের একদিকে যেহেতু লোহার প্লেন পাত লাগানো আছে, কোনো খাঁজ নেই, তাই সেদিক দিয়ে বিক্ষোভকারীরা সহজে উপরে উঠে পড়তে পারবে না। সেক্ষেত্রে পুলিশের বিক্ষোভকারীদের সামলাতে সুবিধা হতে পারে। আবার এই ব্যারিকেড গুলো সম্পূর্ন লোহার হওয়ায় যথেষ্ট ভারী। একসঙ্গে পাশাপাশি এই লোহার কাঠামো গুলোকে রেখে মাঝামাঝি বরাবর লোহার পাইপ দিয়ে আটকানো থাকবে। ফলে ঠেলে সরানোও রীতিমত কষ্টসাধ্য হবে।
বর্ধমান জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন,” এদিন শহরে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। প্রায় হাজারখানেক মানুষের জমায়েত হওয়ার খবর ছিল। তারই প্রস্তুতি হিসেবে এই লোহার ব্যারিকেড নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে এদিন লোক সমাগম কম থাকায় এগুলো ব্যবহার করতে হয়নি।আগামীদিনে বাঁশ, রেল গার্ড এর পাশাপাশি এই লোহার ব্যারিকেড কেও কাজে লাগানো হবে। ল অ্যান্ড অর্ডার সামলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ এই ব্যারিকেড মজুদ করার প্রক্রিয়া চলছে।”
প্রসঙ্গত পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর শহর বর্ধমানের কার্জন গেট থেকে জেলা জজ কোর্টের দিকের রাস্তায় একদিকে রয়েছে জেলা শাসকের অফিস, অন্যদিকে রয়েছে জেলা পুলিশ সুপারের অফিস। এছাড়াও এই এলাকাতেই রয়েছে মহকুমা শাসকদের অফিস, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জেলা পরিষদ, কিছুটা দূরেই জেলা আদালত। রয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আধিকারিকের দপ্তরও। ফলে সারা বছরই এই এলাকার সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে রীতিমত আঁটোসাঁটো।
সমস্ত রাজনৈতিক দলও তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য এবং প্রশাসনের নজরে আসার জন্য এই কার্জন গেট চত্বরকেই কর্মসূচি পালনের জন্য বেছে নেয়। অনেক সময়ই জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন কর্মসূচিও থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের। ফলে পুলিশের কাছে এই গুরুত্বপূর্ন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। আর তাই এবার এই নতুন ব্যারিকেড পুলিশের হাতে নয়া ঢাল হিসেবে কাজে লাগবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।