করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফের বর্ধমানে মৃত্যু, মৃত্যু বেড়ে দাঁড়ালো ২, তীব্র আতঙ্ক জেলা জুড়ে

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ফের পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়ালো জেলা জুড়ে। পাশাপাশি মৃত রোগীর জীবিত অবস্থায় করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট পজিটিভ আসার পরেও কিভাবে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাড়িতেই থেকে গেলেন তা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে জেলা জুড়ে হু হু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলা এবং তারই অঙ্গ হিসাবে কন্টেনমেণ্টের তালিকা ক্রমশই দীর্ঘতর হয়ে উঠতে থাকায় অজানা ভয়ে, আতংকে ভুগতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে খোদ প্রশাসনিক মহল।
এরই মাঝে নতুন করে আতংক ছড়িয়েছে খণ্ডঘোষের এক ব্যক্তির করোনায় মৃত্যুকে ঘিরে। খণ্ডঘোষের তাঁতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা ওই ব্যক্তি জ্বর সহ বেশ কিছু উপসর্গে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এরপরই তাঁকে খণ্ডঘোষ ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থাধিকারিক ডা. প্রণব রায় জানিয়েছেন, খণ্ডঘোষে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ব্যক্তির সোয়াব সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তির আগেই পুল টেস্ট করা হয়েছিল। সেখানে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, খণ্ডঘোষের ওই ব্যক্তির রিপোর্ট পজিটিভ আসায় গোটা এলাকায় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সরকারীবিধি মেনে প্রশাসন ওই ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করবে। এদিকে, ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পরই মৃতদেহকে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি ব্লক মেডিকেল অফিসার এবং খণ্ডঘোষের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ সহ খণ্ডঘোষ থানার ওসি প্রমুখরা জরুরী বৈঠকে বসেন। এরই পাশাপাশি খণ্ডঘোষের কাপসিট গ্রামে আরও দুই যুবকের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর আসায় নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই খণ্ডঘোষ ব্লকেই প্রথম করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছিল। এদিকে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে নতুন করে দুদিনে ২৫জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ২৮৭তে। হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ৭৮জন। ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ২০৮জন। ইতিপূর্বে জেলায় প্রথম সরকারীভাবে মেমারীর এক ব্যক্তির করোনায় মৃত্যু হয়। খণ্ডঘোষের ওই মৃত ব্যক্তির রিপোর্ট পজিটিভ আসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২তে।
এদিকে, নতুন করে জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুরু থেকেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকায় কন্টেনমেণ্ট জোনের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুসারে কন্টেনমেণ্টের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ৭১ এ। অপরদিকে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুততার সঙ্গে বাড়তে থাকায় সরকারী পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলল ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের বর্ধমান শাখা। এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, এদিন ৫ দফা দাবী নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থাধিকারিকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজ্যে পরপর তিনটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে সরকারী হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে তিনজনকে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের দাবী, অবিলম্বে পরীক্ষা সংখ্যা বাড়ানো এবং রোগীদের সরকারী আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা, কোভিড পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়রানি দূর করা ও জটিলতাবিহীন করার দাবী জানানো হয়েছে। করোনার পাশাপাশি সাধারণ ও অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসাও সঠিকভাবে করার দাবী জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে বেসরকারী চিকিত্সাকেন্দ্রেও খরচে লাগাম টানার দাবী জানানো হয়েছে। এদিন এই দাবীতে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিকের অফিসের সামনে বিক্ষোভও দেখায় এসএফআই সমর্থকরা। একইসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কুশপুতুলও দাহ করা হয়। এদিন এই বিক্ষোভ সমাবেশে হাজির ছিলেন এসএফআই-এর জেলা সভাপতি বিশ্বরূপ হাজরা, জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায় চৌধুরী সহ জেলা কমিটির সদস্য তারক মণ্ডল, প্রলয় কুণ্ডু, দিব্যেন্দু নন্দী, উষসী রায়চৌধুরী, রিকাই সাম প্রমুখরা।