ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারী:
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে যখন প্রশাসন সহ সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবন্দি করে নিচ্ছেন সেই সময় কিছু ব্যক্তির আচরণকে ঘিরে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হতে শুরু করেছে অশান্তির পরিবেশ। এমনকি এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো তথ্য পোস্ট করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ।
বর্ধমানের মেমারী থানা এলাকার এক স্কুল শিক্ষিকার পরিবার কে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট কে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। এই ঘটনায় ওই শিক্ষিকা ইতিমধ্যেই মেমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। গোটা ঘটনার বিষয় জানিয়েছেন জেলা সাইবার ক্রাইম দপ্তরেও। সেখান থেকে মেমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করার জন্যও জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। যদিও ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য এই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
জানা গেছে, মেমারী এলাকার বোহারের বাসিন্দা ওই শিক্ষিকার ছেলে লণ্ডনে পড়াশুনা করেন। সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পাট দিয়ে তাতে লেখা হয় যে লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন ওই শিক্ষিকার ছেলে। ছেলের শরীর খারাপ থাকায় তাকে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, চিকিৎসক ওই যুবকের লক্ষণাদি সঠিক নয় বুঝে দ্রুত হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দেন। এমনকি ওই চিকিৎসক এই ঘটনার পরই নিজেকেই স্বেচ্ছাবন্দি করে নিয়েছেন ঘরে। এমনকি চিকিৎসাকেন্দ্রই বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ জানা গেছে, ওই শিক্ষিকা এই ঘটনার পরও হাসপাতাল যাননি। এমনকি তিনি এখন কোথায় আছেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে তারও কোনো হদিশ পাচ্ছেন না এলাকার মানুষ।
এদিকে ফেসবুক মারফৎ বিষয়টি ছড়িয়ে যাওয়ায় অনেকেই ওই শিক্ষিকাকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। এরপরই ওই শিক্ষিকার নজরে আসে গোটা ঘটনা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মেমারী থানায় ঘটনার বিষয়ে জানান। শিক্ষিকা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে গত সেপ্টেম্বরে লন্ডন গেছে পি এইচ ডি করতে। বর্তমানে সে লন্ডনেই আছে। এবং ভাল আছে। কিন্তু কে কারা এই ভুল তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে তা তাঁর জানা নেই। তিনি জানান, তাঁর ছেলের কোনো ফেসবুক একাউন্ট নেই। তবে এই পরিস্থিতিতে তিনি বাধ্য হয়ে তাঁর ছেলেকে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলে লন্ডন থেকে লাইভ পোস্ট করার জন্য বলেছেন। যাতে এই ধরণের মিথ্যবাদীদের জব্দ করা যায়। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকেও এই ধরণের কাজে যুক্ত মানুষদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আর্জি জানিয়েছেন।
যদিও এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষিত এবং এলিট সোসাইটির সদস্য বলে পরিচয় দেওয়া ওই শিক্ষিকার এই আচরণ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের পাশাপাশি আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে এলাকায় এবং শিক্ষক মহলে। জানা গেছে, শনিবার সকালে এই বিষয়টি নজরে আসার পরই সোস্যাল মিডিয়ায় রীতিমত কড়া সমালোচনা করা শুরু হয়েছে ওই শিক্ষিকার পরিবারকে নিয়ে। একইসঙ্গে গোটা বিষয়টি পুলিশকেও জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এই ঘটনার পাশাপাশি বেশ কিছু এলাকায় কিশোর এবং কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক ফাঁকা রাস্তাকে কাজে লাগিয়ে ধর্মঘটের দিনের মতই ক্রিকেট এবং ফুটবল খেলার আদর্শ সময় হিসাবে বেছে নেওয়ায় তা নিয়েও রীতিমত সরব হয়েছেন এলাকার মানুষজন। বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলার বেশ কিছু প্রান্ত থেকে এই ধরণের খবর তাঁরা পাচ্ছেন। এব্যাপারে পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনবোধে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, অনেকেই এই পরিস্থিতিকে নেহাতই ছুটির আমেজ হিসাবে দেখতে শুরু করেছেন। বারবার তাঁরা সতর্ক ও সচেতন হবার নির্দেশ দিলেও কিছু অসভ্য মানুষের জন্য সকলেই বিপদের মুখে পড়তে পারেন। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত জেলায় কোনো করোনা আক্রান্তের তথা কোনো পজিটিভ কেস পাওয়া যায়নি।
*ছবি আকারে ফেসবুক পোস্ট টি সংগৃহিত*