করোনা নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের তৎপরতা, অমিল মাস্ক – পর্যবেক্ষণে ২৭জন

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা ভাইরাস নিয়ে এবার গোটা রাজ্য জুড়েই কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুক্রবার বিকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত জেলাশাসকদের নিয়ে তিনি বৈঠকও করলেন। পরে জেলাশাসকরা সংশ্লিষ্ট সমস্ত জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে এব্যাপারে যুদ্ধকালীন
তৎপরতায় কাজে নেমে পড়ার নির্দেশিকা জারী করলেন।
শুক্রবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, এদিনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এব্যাপারে সবরকমের সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাশাসক এদিন পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সমস্ত দপ্তরের আধিকারিক, বেসরকারী নার্সিংহোম, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান জেলায় কোনো করোনা ভাইরাস আক্রান্তের খবর নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ২৭জন ভিন দেশ থেকে বর্ধমানে এসেছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নজরদারী করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন তাঁদের বিষয়ে রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি চীন ও ভিয়েতনাম থেকে কিছু বাসিন্দা বর্ধমানে এসেছেন। তাঁদের ওপর এই নজরদারী করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় নোবেল করোনা ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতংকিত না হবার জন্য জেলাবাসীর কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এরই পাশাপাশি তাঁরা সমস্ত রকম প্রাক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। ইতিমধ্যেই বর্ধমানে ৬টি এবং কালনা ও কাটোয়ায় ১০টি আইসিইউ বেড তৈরী রাখা হয়েছে করোনার জন্য।
তিনি জানিয়েছেন, শনিবার থেকেই জেলা জুড়ে অহেতুক আতংকিত না হবার জন্য বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি, ফ্লেক্স লাগাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস কি, কি কি করণীয়, কি কি করবেন না প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ১২ মার্চ পূর্ব বর্ধমান জেলায় স্বাস্থ্য দিবস পালন করার পাশাপাশি এই করোনা ভাইরাস নিয়েও প্রচার চালানো হবে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, যে কোনো জ্বরই যে করোনা ভাইরাস নয় এবং তা নিয়ে আতংকিত হবার কোনো কারণ নেই – সেটাই তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে করোনা বিরোধী প্রচারে আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, গ্রামস্তরের স্বাস্থ্য কমিটিগুলিকেও কাজে নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন করোনা ভাইরাসের জেরে কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রেই অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া যাবে না। কোথাও কোনোরকমভাবে ওষুধ বা মাস্কের জন্য অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হলে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এব্যাপারে পুলিশকে নজরদারী করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা মুখ্য স্বাস্থাধিকারিককে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারী করার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সমস্ত ডাক্তারদের একটি তালিকা এবং তাদের তৈরী রাখতে বলা হয়েছে।
এরই পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদেরও এই কাজে লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারী হাসপাতালগুলিতে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থাকে মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। এদিন জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, এন ৯৫ মাস্ক বর্তমানে জেলায় ২৫০টি রয়েছে। আরও ৩৫০টি শুক্রবারের মধ্যে চলে আসছে। পিপিই মজুদ রয়েছে ৯০টি। আরও ৫০টি আসছে। এছাড়াও ফিল্ড মাস্ক এখন মজুদ রয়েছে ৪০ হাজার, আরও ৪০ হাজারের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়াও ইনফ্রা থামোর্মিটার মজুদ রয়েছে ৫০টি ।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, প্রতিটি সরকারী হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতিকে তৈরী থাকতে বলা হয়েছে। রেল ষ্টেশনগুলিতেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রেলের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। তৈরী রাখা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিমকেও। খবর পেলেই তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। প্রসঙ্গত, জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, সরকারী দপ্তরগুলিতে চালু থাকা বায়োমেট্রিক হাজিরার বিষয় নিয়ে এখনও কোনো নির্দেশিকা জারী হয়নি। নির্দেশিকা এলে তা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই জেলায় নোবেল করোনা ভাইরাসের জন্য হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে – ০৩৪২ ২৬৬৫০৯২ নাম্বারে ২৪ ঘণ্টাই কথা বলা যাবে।
এদিকে, শুক্রবার যখন জেলা প্রশাসন করোনা ভাইরাসের আতংককে দুর করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই সময় খোদ বর্ধমান শহর জুড়ে বিশেষ করে এন ৯৫ মাস্ক নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। প্রচুর চাহিদা থাকায় খোলা বাজারে অমিল এখন এই মাস্ক। এছাড়াও থ্রি লেয়ার মাস্কও ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে খবর মিলেছে।
খোদ দোকানদাররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন তাঁদের কাছে শয়ে শয়ে মানুষ আসছেন মাস্কের জন্য, কিন্তু যোগান না থাকায় তাঁরা তা দিতে পারছেন না। এরই মাঝে যাঁরা যোগান পাচ্ছেন তাঁরা সুযোগ বুঝে দাঁও মারার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। যদিও এব্যাপারে জেলাশাসক জানিয়েছেন, এরকম ঘটনা জানতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন