করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী বিশেষ মাস্ক আবিষ্কার মেমারীর দিগন্তিকার, বিজ্ঞানী মহলে হৈ চৈ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারী: গোটা বিশ্বের পাশাপাশি যখন নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ করে মাস্ক নিয়ে চলছে কালোবাজারি, ধরপাকড়। এমনকি খোদ করোনা ভাইরাসের জন্য চলতি সময়ে চিহ্নিত এন-৬৫ মাস্কের জোগান নিয়ে রীতিমত দিশাহারা সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনিক স্তর। সেই সময় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী যুগান্তকারী এক মাস্ক বানিয়ে ফেলল পূর্ব বর্ধমানের মেমারী শহরের বাসিন্দা এবং মেমারী বিদ্যাসাগরস্মৃতি বিদ্যামন্দির – শাখা ২ এর একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী দিগন্তিকা বোস।
ইতিমধ্যেই তাঁর আবিষ্কৃত এই নয়া মাস্ক সম্পর্কে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক কোভিড-১৯ সলিউশন চ্যালেঞ্জ এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভারত সরকারের পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের ভাইরোলজিস্টরা দিগন্তিকার এই আবিষ্কারে রীতিমত অভিভূত এবং আশাবাদী। অপরদিকে ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বশাসিত সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেশন ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা কিভাবে দিগন্তিকার এই মাস্ক কাজ করছে তা খতিয়ে দেখা শুরু করছে। ওড়িশার বীর সুন্দর সাই ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির আইডিয়া ইনভেশন শাখা ‘হ্যাক ফর কোভিড – ১৯ ‘এর তালিকা ভুক্তও হয়েছে এই আবিষ্কার।
দিগন্তিকা যার পোশাকি নাম দিয়েছে ‘Pure air provider and virus destroyer mask’। উল্লেখ্য, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পরপর নতুন উদ্ভাবনের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার জয় করেছে দিগন্তিকা। এই সালেই দিগন্তিকা তৈরী করে দুর্ঘটনারোধে গাড়ি চালককে নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্র। মেমারী পুরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিগন্তিকার বাবা সুদীপ্ত বোস এবং মা শুভ্রা বোস জানিয়েছেন, দিগন্তিকা টেকনোলজি তথা কারিগরী বিদ্যা ও মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবন করেছে এমন এক যন্ত্র যা কোনো বাইক বা চারচাকা গাড়িতে ব্যবহার করলে চালকের গাড়ি চালানোর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তাকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন আবেগজড়িত বক্তব্যের (ইমোশনাল স্পিচ) মাধ‌্যমে চালককে নিয়ন্ত্রণ করবে। যার পোশাকি নাম Technology with emotion based anti collision device for vehicle।
তাঁরা জানিয়েছেন, এর আগে দিগন্তিকা যে সমস্ত আবিষ্কার তথা নতুন উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সেগুলি হল – ১) সুন্দর বনে জীবিকার প্রয়োজনে যাঁরা জঙ্গলে যান, তাঁদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ চশমা, যা ব্যবহারে মাথা বা ঘাড় না ঘুরিয়েই পিছন দিকও দেখা যায়। ২) ডাষ্ট কালেক্টিং এটাচমেন্ট ফর ড্রিল মেশিন। এটি যেকোন হ্যন্ড ড্রিল মেশিনের সামনে সহজে যুক্ত করে ড্রিল বা ফুটো করলে কোন ধুলো উড়বেনা। ধূলো একটি চেম্বারে জমা হবে। আর এজন্য কোন অতিরিক্ত বিদ্যুত খরচও হবেনা। ড্রিল মেশিন এর কম্পন থেকেই শক্তি গ্ৰহণ করে এই কাজ করতে সক্ষম। ৩) স্মার্ট সার্ভিক্যাল কলার – বারনৌলির সূত্র কাজে লাগিয়ে বিশেষ কারিগরি পদ্ধতিতে তৈরি কলার সার্ভিক্যাল স্পন্ডিলাইটিস রোগী পড়লে তাঁর প্রচণ্ড ঘাম বা অস্বস্তি হবে না। বস্তুত, এই সমস্ত আবিষ্কারের পর চলতি সময়ে করোনা নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়ে আতংক আর মৃত্যু মিছিলের মাঝেই দিগন্তিকা এই বিশেষ মাস্ক তৈরী করায় রীতিমত হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে।
নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বঙ্গ কন্যার নয়া আবিষ্কার, গবেষণায় দিগন্ত এনে দেবে বলে আশাবাদী এখন বিজ্ঞানী মহল। দিগন্তিকার বাবা-মারা জানিয়েছেন, লক ডাউন চলছে। পরীক্ষা বন্ধ। তাই বাড়িতে বসেই সুযোগের পূর্ণ সদব্যবহার করল দিগন্তিকা। তাঁরা জানিয়েছেন, এই মাস্কের জন্য খরচ পড়বে মাত্র মাত্র ২০০ টাকা। সুদীপ্তবাবু জানিয়েছেন, এই বিশেষ ধরনের মাস্ক, যা পরে প্রশ্বাস নিলে ধূলিকণা ও ভাইরাস মুক্ত বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করবে। অপরদিকে নভেল করোনা পজেটিভ কোনো ব্যক্তি পরলে তাঁর ত্যাগ করা নিঃশ্বাস ,হাঁচি , কাশি থেকে নির্গত ড্রপলেট এর মধ্যে থাকা করোনা ভাইরাস বা অন্য কোন ভাইরাসকে প্রতিনিয়ত নষ্ট করে দেবার ক্ষমতা রয়েছে এই মাস্কের। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যাবে।
কিভাবে এই মাস্ক কাজ করে – সে প্রসঙ্গে সুদীপ্তবাবু জানিয়েছেন, এই মাস্কের দুটি অংশ। প্রথম অংশে রয়েছে দুটি একমুখী ভাল্ব এবং দ্বিতীয় অংশে রয়েছে দুটি আধার। প্রথমে প্রশ্বাস গ্ৰহণের বাতাস থেকে ধূলিকণা, জলকণাকে আটকে দেয় ও ভাইরাসের লিপিড প্রোটিনকে ধ্বংস করে বিশুদ্ধ বাতাস একমুখী ভাল্বের মধ্যে দিয়ে মাস্কের ভিতর দিয়ে ফুসফুসে যায়। আবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় অন্য একটি এক মুখী ভাল্বের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আর একটি আধারের ভিতরে প্রবেশ করে।
ফলে ঐ আধারের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তি সাহায্য মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ভাইরাসের লিপিড প্রোটিনের স্তরটি ভেঙে দেয়। ফলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে গিয়ে আর সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। যার ফলে নভেল করোনা পজেটিভ ব্যক্তি এই মাস্ক পরলে তার থেকে নির্গত ড্রপলেটে আর ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকবে না। তবে সুদীপ্তবাবু জানিয়েছেন, এখনই দিগন্তিকার এই আবিষ্কার সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলতে মানা রয়েছে ভারত সরকারের। যেহেতু এটি তাঁদের কাছে পরীক্ষার বিষয়।