করোনার জের – বর্ধমানে ফের প্রায় কড়া লকডাউন বিধিই লাগু করছে পুরসভা ও প্রশাসন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলায় দ্রুত হারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলায় বুধবার থেকে গোটা জেলা জুড়েই কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত গোটা জেলায় মোট ২৬২জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এখনও ৬৭জন। রবিবার জেলায় সর্বাধিক একদিনে ৩৮জন আক্রান্তের পরই নড়চড়ে বসেছিল জেলা প্রশাসন। সোমবার নতুন করে আরও ৯জন আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার ৫জন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। 
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে জেলায় কন্টেনমেণ্টের সংখ্যাও। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশই বাড়তে থাকায় কন্টেনমেণ্ট জোনের সংজ্ঞারও পরিবর্তন করা হয়েছে। এদিনই বর্ধমান পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ জানিয়েছেন, পুর এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মঙ্গলবারই একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বুধবার থেকে বর্ধমান পুরসভায় মানুষজনের অহেতুক আসা যাওয়া বন্ধ করা হচ্ছে। 
তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময়ই দেখা যায়, একজনের প্রয়োজনে তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন আসছেন। পুরসভা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অমিতবাবু জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত পুরসভার কোনো কর্মী আক্রান্ত হননি এটা সৌভাগ্য। কিন্তু একজন কোনো কর্মী আক্রান্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই পুরসভা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে পৌর পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তাঁরা বাধ্য হয়েই বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, বুধবার পুরসভার গেটের সামনেই অস্থায়ী ছাউনিতে সমস্ত দপ্তরের জন্য একটি করে কাউণ্টার তৈরী করা হচ্ছে। সেখানে পুরসভার কর্মীরা থাকবেন। সাধারণ মানুষ যে দপ্তরে তাঁর কাজ নিয়ে আসবেন, সেই দপ্তরের জন্য নির্দিষ্ট ড্রপ বক্সে তাঁর বক্তব্য লিখে জমা দেবেন। একইসঙ্গে সেই কাউণ্টারে তাঁর বক্তব্য জানাবেন বা কাগজপত্র দেবেন। সেই কাউণ্টার থেকে পুরকর্মীরা এক্সিকিউটিভ অফিসারের কাছে এসে সেই কাজ করিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু কোনোভাবেই পুরসভার ভেতর কোনো সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারবেন না। একমাত্র যদি তাঁকে স্বশরীরে ডেকে পাঠানো হয় সেক্ষেত্রেই তিনি যেতে পারবেন। তবে তাঁকে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে।

বিজ্ঞাপন
অমিতবাবু জানিয়েছেন, সোমবারই নতুন করে কন্টেনমেণ্ট জোনের সংজ্ঞা বদল সংক্রান্ত নিয়মাবলী এসে পৌঁছেছে। এখন থেকে কেউ আক্রান্ত হলে কেবলমাত্র তাঁর বাড়িই নয়, ৫০ মিটারের বৃত্তাকার এলাকাও এই কন্টেনমেণ্ট জোনের অধীনে চলে আসবে। সেক্ষেত্রে পুরসভার পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যানার, লিফলেট ছাড়াও মাইকিং করা হবে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এরই পাশাপাশি পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডেই এই প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কণ্টেনমেণ্ট জোন এলাকায় পুরসভার কর্মীরা নিয়মিত নজরদারী চালাবেন। মাস্ক না পড়ে রাস্তায় বের হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে, জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় বুধবার থেকেই কার্যত লকডাউন পর্বের মতই কঠোরতার রাস্তা নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন। 
জেলা প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, করোনা আক্রমণের শুরুর পরেই যেভাবে জেলার প্রতিটি কোনায় কোনায় বাড়ি বাড়ি নজরদারী চালানো হয়েছিল – ঠিক সেই একইভাবে আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সিভিক ভলেণ্টিয়ার, ভিলেজ পুলিশ প্রভৃতিদের নিয়োগ করা হবে। ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন, এরই পাশাপাশি প্রতিটি পঞ্চায়েতকেই নিজের নিজের এলাকায় মাইকে করোনা সতর্কতা নিয়ে প্রচার চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিটি বাজার এলাকায় ব্যাপক নজরদারী এবং ছোট ছোট টিম করে হানাদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাস্ক না পড়ে কেউ রাস্তায় নামলেই তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গোটা জেলা জুড়েই বাড়ি বাড়ি সার্ভেতে যদি দেখা যায় কারুর কোনো উপসর্গে রয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই তাঁকে বাড়িতে রাখা যাবে না। এব্যাপারে সমস্ত ব্লক প্রশাসনকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কার্যত অফিসিয়ালি কোনো লকডাউন ঘোষণা না হলেও জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ঠেকাতে লকডাউন পর্বের মতই কড়া ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

আরো পড়ুন