ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: শাস্ত্রে বলা হয়েছে – রাজদ্বারে শ্মশানে চ যতিষ্ঠতি স বান্ধব। অর্থাৎ উৎসব থেকে শ্মশানঘাটে যে সঙ্গী হবে সেই বন্ধু। কিন্তু এবার সেখানেও থাবা বসিয়েছে করোনা আতঙ্ক। প্রকৃত বন্ধু চেনার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে মারণ করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের জেরে যখন গোটা দেশ লকডাউন। বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ, এমনকি কেউ বিপদে পড়লেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কাউকে ডাকতে সাহস পাচ্ছেন না, সেই সময় খোদ বর্ধমান শহরের নির্মল ঝিল শ্মশানেই দেখা মিলছে বন্ধু বান্ধব অকুতোভয়দের।
বর্ধমান নির্মল ঝিল শ্মশান কর্তৃপক্ষের দাবী, দাহ করতে এক একটি দলে নয়নয় করেও যেখানে ৫০ থেকে ১০০জনেরও বেশী মানুষ আসেন, সেখানে গত ১৭মার্চ থেকে এই সংখ্যাটা একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। কেবলমাত্র প্রয়োজনের মতই লোকজন আসছেন। সোমবার নির্মল ঝিল শ্মশানে গিয়ে দেখা গেছে, এদিন সকাল থেকে বর্ধমান শহরের মাত্র দুটি দেহ দাহ করার জন্য আনা হয়েছে। একটি বর্ধমানের খোসবাগান পাড়ার বাসিন্দা বকুল পাঁজার (৭৬), অন্যটি কানাইনাটশালের বাসিন্দা ঝর্ণা ঘটকের (৭০)।
বকুল পাঁজার ছেলে শান্তনু পাঁজা জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে মাল্টি অর্গান ফেলিওর-এর কারণে। আর ঝর্ণা ঘটকের আত্মীয় আশীষ ঘটক জানিয়েছেন, হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ায় মারা যান ঝর্ণাদেবী। নির্মল ঝিল শ্মশান ঘাট কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, নির্মল ঝিল শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লীর পাশাপাশি রয়েছে গ্যাস চুল্লীও। কিন্তু গত ১৭ মার্চ থেকে লকডাউনের পর কার্যতই মৃতদেহের সংখ্যাও আশ্চর্য্যজনক ভাবে কমে গেছে।
জানা গেছে, বৈদ্যুতিক চুল্লীকে চালু রাখার জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০টি দেহ দরকার হয়, কিন্তু করোনার জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই সংখ্যক দেহ আসছে না, তাই সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে গ্যাস চুল্লীকে। এই সুযোগে গ্যাস চুল্লীর মেরামতির কাজও চলছে। শ্মশান সূত্রেই জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত ২০১৯-২০২০ এই আর্থিক বছরে এই শ্মশানে দাহ করা হয়েছে প্রায় ২৪৫০জনকে।
আর দেশ জুড়ে করোনা ভীতির সময়কালে ১৭ মার্চ থেকে সোমবার পর্যন্ত মোট ৮০ জনের দেহ দাহ করা হয়েছে। যদিও এই সংখ্যাকে স্বাভাবিক বললেও শ্মশান কর্মীদের দাবী, চলতি করোনার জেরে শ্মশানে আসার লোক রীতিমতই নজর কাড়া ভাবেই কমে গেছে। সোমবার দুটি দেহ এলেও তাঁদের সঙ্গে আসা লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোণা মোট প্রায় ২৫জনের মত।