করোনা যুদ্ধের মাঝেই এবার পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে নেমে পড়ল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারী থাকার মাঝেই এবার শুরু হয়ে গেল মরশুমী পতঙ্গবাহিত রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজ। গোটা রাজ্য জুড়েই পতঙ্গবাহিত বিভিন্ন রোগ
যেমন, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোধে ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু হয়েছে। এবার পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েও চলতি এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হয়েছে এই পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা নিয়ে সতর্কতা, প্রচারের পাশাপাশি তাঁরা গোটা জেলা জুড়েই সমস্ত গ্রাম সংসদ এলাকায় ব্যাপকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ওপর জোড় দিয়েছে। বিশেষত, গত কয়েকবছর ধরেই জেলার বিক্ষিপ্ত কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা দেওয়ায় সেই সমস্ত এলাকায় বাড়তি সতর্কতাও নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রাম স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি খোঁজ নেওয়া এবং একটি করে তালিকা তৈরীর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় ড্রেনগুলিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, কোথাও যাতে জল জমে থাকতে না পারে – সে বিষয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে পতঙ্গবাহিত বিভিন্ন রোগপোকার আক্রমণ রোধে বাড়ি বাড়ি এবং প্রতিটি এলাকায় এলাকায় ওষুধ স্প্রে করা চলছে। উল্লেখ্য, অন্যান্য বছরের মত এবারও রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে ডেঙ্গু নিয়ে রাজ্যের ১৫০টি শহরকেন্দ্রিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে রীতিমত সতর্ক করা হয়েছে।
জানা গেছে, এই জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী, উত্তর ২৪ পরগণা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ অনুসারে প্রতিটি বাড়িতেই তথা পরিবারভিত্তিক একটি করে কার্ড তৈরীর নির্দেশ রয়েছে। সেইকার্ডে পরিবারের সদস্যদের বিবরণ এবং তাঁদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো সমস্যা আছে কিনা, থাকলে তা কি কি ধরণের প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ রয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুসারে সংশ্লিষ্ট এই কার্ড অনুযায়ী পরিবার ভিত্তিক রিপোর্ট প্রতিদিনই রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরে জানাতে হবে।
উল্লেখ্য, রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই কাজে বাড়ি বাড়ি রিপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য ৩০০ বাড়ি পিছু দুজন গ্রাম্যস্বাস্থ্য কর্মীকে নিয়োগ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে তাঁরা মোট ৩০০ বাড়ির রিপোর্ট তৈরী করবেন। মাসে অন্ততপক্ষে ২০ দিন কাজ করতেই হবে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একজন করে সুপারভাইজার নিয়োগ করতে হবে এই কাজের তদারকির জন্য। এরই পাশাপাশি বিভিন্ন জলাশয়ে মশার লার্ভা খাদক মাছ ছাড়ার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গ্রাম সংসদ এলাকায় নির্ধারিত সুস্বাস্থ্য দিবসকে যথাযথ পালনের ওপরও জোড় দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে একদিন প্রতিটি গ্রাম সংসদ এলাকায় সাফাই অভিযান চালানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, অন্যান্যবারের মত এবারও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সহায়তায় প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাপকভাবেই তাঁরা জনসচেতনতা গড়ার কাজ করছেন। মিশন নির্মল বাংলা অভিযানের অঙ্গ হিসাবে বর্জ্য পদার্থকে যত্রতত্র না ফেলার জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচার চলছে। তিনি জানিয়েছেন, একদিকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অন্যদিকে পতঙ্গবাহিত রোগের বিরুদ্ধেও সমানতালে তাঁরা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, গতবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় বর্ধমান শহর সহ কাটোয়া এবং কালনা মহকুমায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর মিলেছিল। গলসীতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই গতবছর যে সমস্ত জায়গায় ডেঙ্গুর প্রভাব দেখা গিয়েছিল এবার সেই সমস্ত জায়গায় জোরদার অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
                                                  ছবি – ইন্টারনেট