ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা সংক্রমণ দ্রুততার সঙ্গে বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন এবার পুর এলাকায় ওয়ার্ড কমিটি এবং পঞ্চায়েত এলাকায় পাড়া কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিল। বুধবার জেলাশাসক বিজয় ভারতী সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যে হারে পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে তাঁরা উদ্বিগ্ন। কি কারণে এই বাড়বাড়ন্ত তা প্রতিনিয়তই তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। এদিন এই বৈঠকে হাজির ছিলেন জেলার সমস্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরাও।
এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন, গোটা জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে খোদ বর্ধমান পুরসভা এলাকা। পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কমবেশী প্রায় সমস্ত ওয়ার্ডেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত গোটা জেলায় যেখানে ১৯৮২জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে কেবলমাত্র বর্ধমান পুর এলাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩৪ জন। শুধু তাইই নয়, গোটা জেলায় যেখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা বুধবার পর্যন্ত ৩৮জন সেখানে বর্ধমান পুরসভাতেই মারা গেছেন ২৫জন। এই ঘটনায় উদ্বিগ্নতা আরও বেড়েছে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং সুস্থ হওয়ার হারের নিরিখে ভাতার, কাটোয়া পুরসভা এবং জামালপুর এলাকার অবস্থা ভাল। এই এলাকাগুলিতে এই হার প্রায় ৮০ শতাংশ। অন্যদিকে, বর্ধমান পুরসভা, খণ্ডঘোষ, মেমারী ১ অঞ্চলে করোনায় আক্রান্তের হার বাড়লেও সুস্থতার হার এখানে কম। জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বাড়ায় একটি নতুন হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, গোটা জেলায় ২১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৫টি পঞ্চায়েতে কোনো করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, বর্ধমান পুরসভা সহ জেলায় করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার কারণ হিসাবে জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, বর্ধমান পুর এলাকা ঘন জনবসতি হওয়ায় সংক্রমণ বাড়ছে। এছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিকদের আসা যাওয়া, নিয়মিত ডেলি প্যাসেঞ্জাররা রেড জোন, অরেঞ্জ জোনে যাতায়াত করার পাশাপাশি প্রাথমিক সংযোগে থাকা মানুষদের সঠিক সময়ে পরীক্ষা না করানো – সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কাজ করছে বলে তাঁরা মনে করছেন। তিনি জানিয়েছেন, এজন্যই করোনার টেষ্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক সংযোগে থাকাদের যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার কারণেই এবার পুর এলাকায় ওয়ার্ড কমিটি এবং পঞ্চায়েত এলাকায় পাড়া কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ওয়ার্ড কমিটিতে একজন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি, একজন স্থানীয় ক্লাবের প্রতিনিধি এবং এলাকার একজন সাধারণ মানুষকে রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের মাস্ক, স্যানিটাইজার সহ সমস্ত কিছু দেওয়া হবে। এলাকায় যাঁরা করোনা আক্রান্ত তাঁদের কি অবস্থা, যাঁরা হোম কোয়ারেণ্টাইনে রয়েছেন তাঁদের কি অবস্থা, প্রাথমিক সংযোগে থাকা ব্যক্তিদের ঠিকমত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে কিনা প্রভৃতি যাবতীয় বিষয় এই কমিটি দেখবে। একইভাবে পঞ্চায়েত এলাকাতেও পাড়া কমিটি একইভাবে কাজ করবে। এরই পাশাপাশি যে সমস্ত এলাকায় ১০জন আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে আলাদা করে একটি নজরদারী কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, পজিটিভ বা নেগেটিভ উভয়ক্ষেত্রেই কড়া নজরদারী চালাবে এই কমিটি। এরই পাশাপাশি এদিন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যে লকডাউন করা হচ্ছিল আঞ্চলিকভাবে সে বিষয়েও জেলাশাসক স্বীকার করেছেন, লকডাউন করার পরও সংক্রমণ কমানো যায়নি। বরং বেড়েই চলেছে। তাই জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বাজার এলাকাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা। সেক্ষেত্রে বর্ধমান পুরসভার সঙ্গে কথা বলে পুর এলাকায় জোড় বিজোড় পদ্ধতিতে দোকান বাজার খোলা রাখার কথাও তাঁরা ভাবছেন।
এরইমধ্যে এদিন জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে বর্ধমানে প্রতি রবিবার বাজার ও দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার বিষয়ে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিকেল ৫টার মধ্যে সমস্ত দোকান, বাজার বন্ধের যে সিদ্ধান্ত জারি রয়েছে তার পরিবর্তে এই সময়সীমা সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক বিশ্বেশর চৌধুরী জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই জেলাশাসকের কাছে বাজার খোলা ও বন্ধের সময়সীমা পরিবর্তনের আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আসন্ন দুর্গোৎসবের আগে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছে জেলাশাসকের কাছে।