কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত বর্ধমান জেলার দুই গৃহবধূ, শোকের ছায়া খন্ডঘোষ ও গলসিতে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমানের খন্ডঘোষ থেকে বিহার সহ উত্তর ভারত বেড়াতে গিয়ে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন খন্ডঘোষের তোরকোনো ও গলসীর ইরকোনো এলাকার বাসিন্দা দুই গৃহবধূ। খন্ডঘোষ ব্লকের তোরকোনা গ্রামের মৃত গৃহবধূর নাম মালতি কুন্ডু (৫৭)। অন্যজন গলসী ২ ব্লকের ইরকোনা গ্রামের স্মৃতিকা হাজরা (৩৮)। দুই মৃতা মহিলার বাড়ি খণ্ডঘোষ বিধানসভার অন্তর্গত। 

বিজ্ঞাপন
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৩ মার্চ তোরকোনা গ্রামের এক ভ্রমনকারী সংস্থা মোট ৬৪ জনকে নিয়ে বিহার সহ উত্তর ভারত বেড়াবার জন্য রওনা হয়েছিল। বিহার সহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করার পর শ্রীনগর এলাকায় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখছিলেন ভ্রমণকারিরা। গত ২৪ মার্চ শ্রীনগর এলাকার গান্দেরওয়াল জেলার হরিগানওয়ান এলাকা পরিদর্শনের পর শ্রীনগর-লেহ হাইওয়ে ধরে হওয়ার সময় একটি টেম্পো ট্রাভেলার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে গাড়িতে থাকা প্রায় ২৪জন গুরুতর জখম হয়। ঘটনাস্থলেই তাদের মধ্যে দুজন মারা যান। তারা বর্ধমানের খন্ডঘোষ ও গলসির দুই মহিলা।

ভ্রমণকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনায় আরো ৪ জন ভ্রমনার্থীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চোট লাগে। ওই রাজ্যের পুলিশ সহ সেনাবাহিনী ও এলাকাবাসীদের তৎপরতায় আহতদের উদ্ধার করে শ্রীনগর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করা হয়। আহতদের নাম উর্মিলা মণ্ডল, রুপালি কোলে, বঙ্কু কোলে। আহতদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ ব্লকের তোরকোনা গ্রামে। উর্মিলা মণ্ডল এর বাঁ হাত কেটে বাদ দিতে হতে পারে বলে জানাগেছে।

এদিকে দুর্ঘটনায় মৃত মালতি কুন্ডুর স্বামী কার্তিক কুন্ডুও একইসাথে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ২৪ তারিখের ভ্রমণে যাননি কার্তিক কুন্ডু। হোটেলেই বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি শরীর খারাপ থাকার জন্য। মৃতার বড় ছেলে সুভাষ কুন্ডু জানান, সংবাদ মাধ্যম দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ করার পর তারা জানতে পারেন দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোট ৭ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে তার মা মালতি কুন্ডুও আছেন। তিনি জনায়েছেন, দুর্ঘটনার পর জম্মু কাশ্মীর পর্যটন দপ্তর সহ এলাকার পুলিশ প্রশাসন প্রচন্ড সাহায্য করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ২৫ মার্চ রাতের মধ্যেই তার মায়ের মৃতদেহ তোরকোনা গ্রামে চলে আসবে।

খণ্ডঘোষ পঞ্চায়েত সমিতির সহসভাপতি শ্যামল কুমার দত্ত ও তোরকোনা গ্রামবাসী অমিত সরকার জানিয়েছেন, তারা দুর্ঘটনার খবর শোনার পরই খণ্ডঘোষ বিধানসভার বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের সহযোগিতাতেই আজ ২৫ মার্চ এর মধ্যেই ফিরে আসছে মৃতদেহ। অন্যদিকে গলসি ২ ব্লকের ইরকোনা গ্রামের তৃণমূল কর্মী নব কুমার হাজরা জানিয়েছেন, গ্রামের গৃহবধূ স্মৃতিকা হাজরা বেড়াতে গিয়েছিলেন বিহার সহ উত্তর ভারত। ২৪ মার্চ দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যান গ্রামের গৃহবধূ স্মৃতিকা হাজরা।

এদিকে খণ্ডঘোষ বিধানসভার অন্তর্গত তোরকোনা ও ইড়কোনা গ্রামের দুই গৃহবধূর এই আকস্মিক মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গ্রামে। খণ্ডঘোষ বিধানসভার বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ জানিয়েছেন, গতকাল ২৪ মার্চ দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই জেলা ও রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুর্ঘটনায় মৃত ভ্রমনার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। বিধায়ক জানিয়েছেন, শোকস্তব্ধ পরিবারের পাশে তিনি ও তার দল থাকবে। মৃতদেহ ফিরে আসার পর দুই পরিবারের বাড়ির লোকজনদের সমবেদনা জানানো হবে।

আরো পড়ুন