কৃষি মন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমফুনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ৪ জেলার পর্যালোচনা বৈঠক বর্ধমানে

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: সদ্য রাজ্যের বুকে তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া আমফুনের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের চার জেলার কত টাকার ক্ষতি হয়েছে তারই হিসাব কষা শুরু হল। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলা সার্কিট হাউসে ৪জেলাকে নিয়ে এব্যাপারে বৈঠক করলেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার, রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক বিজয় ভারতী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া সহ বাঁকুড়া, বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকরাও।
এদিন কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন আমফুনের পুঙ্খানুপুঙ্খ ক্ষতির হিসাব। আর তাই এখনই বলা যাচ্ছে না কৃষিতে ঠিক কত ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ধান, সব্জি, আম, ফুলের পাশাপাশি পেয়ারা, এমনকি কলাগাছেরও যে ক্ষতি হয়েছে তাও তাঁরা হিসাবের মধ্যেই রাখছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁরা মনে করছেন গোটা রাজ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এদিন এই ৪ জেলাকে নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে কিভাবে পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার হিসাব একত্রিত করে তা মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
কৃষিমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, আমফুনের প্রভাবে সমুদ্রকুলবর্তী এলাকা তথা চাষের জমিতে লবণাক্ত জল ঢুকে গিয়ে সেখানকার জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে এই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা চলছে। পাশাপাশি মাছ চাষেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে, এরই পাশাপাশি এদিন কৃষিমন্ত্রী এবং কৃষি উপদেষ্টা উভয়েই কৃষকদের শস্যবীমা করানোর কাজে আরও বেশি উৎসাহ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন।
যদিও খোদ পূর্ব বর্ধমান জেলার একাধিক ব্লকের চাষীরা অভিযোগ করতে শুরু করেছেন, তাঁরা শস্যবীমার ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না। চাষীদের অভিযোগ, তাঁরা সরকারীভাবে শস্যবীমা করালেও সংশ্লিষ্ট ইনসিওরেন্স কোম্পানী তাঁদের ক্ষতির টাকা দিচ্ছেন না। চাষীদের দাবী, এব্যাপারে বীমা কোম্পানী থেকে তাঁদের বলা হচ্ছে সরকার চাষীদের জন্য যে বীমার প্রিমিয়াম দেবার কথা ছিল গত ২ বছর ধরে তা না দেওয়ায় তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। ফলে, একদিকে, যখন কৃষিমন্ত্রী চাষীদের শস্য বীমা করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলছেন সেই সময় চাষীদের পাল্টা অভিযোগ, সরকার টাকা না দেওয়ায় তাঁরা ক্ষতির টাকা পাচ্ছেন না।
যদিও এব্যাপারে খোদ কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার সমস্ত বীমার প্রিমিয়ামের টাকা বীমা কোম্পানীকে নিয়মমাফিক দিয়ে চলেছে। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলায় আমফুনের প্রভাবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কাছাকাছি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। ইতিমধ্যেই তিনি গলসী ও আউশগ্রামে বোরো ধানের ক্ষতি খতিয়ে দেখতে এলাকা পরিদর্শনও করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই জেলায় কেবলমাত্র কৃষিক্ষেত্রেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এখনও পর্যন্ত ৫৭০ কোটিরও বেশি। এছাড়াও বিদ্যুত এবং একাধিক জলসেচ প্রকল্পেরও ক্ষতি হয়েছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসার পর এই ক্ষতির পরিমাণ ৬০০ কোটিরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Recent Posts