কোল্ড স্টোরেজে মজুদ আলুর অর্ধেক নষ্ট! মাথায় হাত চাষীদের, ক্ষতিপূরণের দাবিতে জিটি রোড অবরোধ চাষীদের

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারী: হিমঘরে চাষীদের রাখা মজুদ আলুর অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে এই অভিযোগে শনিবার মেমারী থানার নিমো ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর গ্রামের কাছে তিরুপতি কোল্ড স্টোরেজের সামনে নষ্ট হয়ে যাওয়া আলু ফেলে জিটি রোড অবরোধ করল ক্ষতিগ্রস্থ চাষীরা। ব্যস্ততম জিটি রোড আচমকা অবরোধে তীব্র যানজট শুরু হয়। খবর পেয়ে এসডিপিও সদর সুপ্রভাত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মেমারি থানার ওসি সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। চাষিদের অভিযোগ শুনে এসডিপিও চাষীদের আশ্বস্ত করেন জানান তারা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় তার ব্যবস্থা করবে পুলিশ। বিক্ষোভরত চাষীদের কাছে সহযোগিতায় চায় পুলিশ। এরপরই অবরোধ থেকে সরে আসেন বিক্ষোভকারী চাষীরা।

 উল্লেখ্য রাজ্যের বড় হিমঘর গুলির মধ্যে অন্যতম বড় হিমঘর বলেই পরিচত তিরুপতি হিমঘরটি। একসঙ্গে তিন লক্ষ একানব্বই হাজার বস্তা আলু মজুত রাখার ক্ষমতা রয়েছে এই হিমঘরের। মেমারি ১ ব্লকের বিডিও আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যা দেখেছি তাতে ২ লক্ষ ৯২ হাজার বস্তার আলুই ব্যবহারের অনুপোযুক্ত হয়ে গিয়েছে। সোমবার আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসব এবিষয়ে। প্রায় দশ হাজার চাষির মজুদ আলু নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এত বিপুল পরিমানে আলু নষ্ট হয়ে গেলে সেটা খুব খারাপ ব্যাপার হবে। তবে বীমা করানো থাকায় চাষীরা হয়তো ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন। প্রশাসনিক ভাবে সামগ্রিক বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ 

হিমঘরের ম্যানেজার কাজি মেহবুব জাহেদি ওরফে রানা বলেন, ‘কিভাবে এটা হলো আমরাও বুঝতে পারছিনা। তবে অবশ্যই টেকনিক্যাল কোন সমস্যা হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা এসে দেখবে। ক্লোড স্টোরেজে তিনটি চেম্বারে মোট ১৯টা রেইক আছে। এরমধ্যে ২ টি রেইকের আলু পচে গিয়েছে।’ তবে হিমঘরের মালিক শিউ প্রসাদ ভাত্তার (Sheo Prakash Bhattar) বলেন, ‘আমি যা শুনেছি গ্যাস লিক করার কারণেই দুটো চেম্বারের আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এটা একটা দুর্ঘটনা। ইচ্ছা করে কেউ তো এই কাজ করবে না। আমার বেশ কয়েকজন লোক যারা স্টোরে থাকে তারা উত্তরপ্রদেশে গিয়েছে। ওদের ফিরে আসতে বলেছি। সোমবার প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসছি। প্রশাসন যেরকম বলবে তা শুনে পরবর্তী সিধান্ত নেব।’

প্রসঙ্গত এদিন হিমঘরের বিপুল পরিমাণ আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চাষীরা জিটি রোড অবরোধ করে দিয়েছে এই খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ পৌঁছনোর পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মেমারি ১ ব্লকের বিডিও আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ, জেলা এগ্রিকালচার বিপনন দপ্তরের আধিকারিক। হিমঘরের মালিক এদিন না থাকলেও ম্যানেজার ছিলেন। প্রশাসনের আধিকারিকরা হিমঘরের ম্যানেজার কে সামনে রেখেই চাষীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সোমবার প্রশাসনের আধিকারিক, মালিক পক্ষ ও পুলিশের উপস্থিতিতে চাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আলোচনা হবে। সেখানেই সামগ্রিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিন বিক্ষোভকারী চাষীরা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে এই কোল্ড স্টোরেজ থেকে প্রায় সাড়ে সাতশো বস্তা আলু বের করা হয়। সমস্ত আলুই পচা বের হওয়ার পরেই অনেকের মাথায় হাত দেওয়ার অবস্থা তৈরি হয়, আর তার পরই ক্ষতিপূরণের দাবিতে হিমঘরের সামনে জিটি রোড অবরোধ করে দেওয়া হয়। এদিন ক্ষতিগ্রস্থ চাষী শেখ আশাদুল্লাহ বলেন, ‘আমার ৯৮৫ প্যাকেট আলু ছিল। তার মধ্যে আজই বেড়িয়েছে ১২৭ প্যাকেট আলু, পুরোটাই পচে গিয়েছে। এখন কে দেখবে আমাদের ? বাজারে এই সময়ে আলুটা দিতে পারলে দুটো টাকা বেশী পেতাম আমরা। এখনতো সবই শেষ হয়ে গেল।’

Recent Posts