ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,খণ্ডঘোষ: ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং যখন তখন মারধরের অভিযোগ ছিলই, এবার এক দশম শ্রেণীর ছাত্রকে ক্লাসের মধ্যেই প্রথমে কিল,চড়, ঘুষি মারার পর উইকেট দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠলো খন্ডঘোষ থানার চাগ্রাম হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক জহরলাল কোনারের বিরুদ্ধে। ছাত্র সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় কে রক্তাক্ত, গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে খন্ডঘোষ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় মঙ্গলবারই।
মঙ্গলবার বিকালেই খন্ডঘোষ থানায় সৌভিকের বাবা প্রশান্ত বন্দোপাধ্যায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জহরলাল কোনারের বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খন্ডঘোষ থানার পুলিশ। প্রশান্ত বাবু জানিয়েছেন, চিকিৎসক সৌভিকের ইউএসজি, সিটি স্ক্যান সহ অনান্য পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এদিকে মঙ্গলবারের পর বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক আর স্কুলে আসেননি, তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে নিগৃহীত ছাত্রের পরিবারের সন্দেহ। এমনকি ওই শিক্ষকের ফোন সুইচ অফ থাকায় কোন যোগাযোগ করা যায়নি। শুধু অভিযুক্ত শিক্ষকই নন, স্কুলের টিচার ইন চার্জ সমরেশ দাঁ এর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ফোন বন্ধ থাকায় ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে একজন শিক্ষক শাসন করার নামে কিভাবে একজন ছাত্রের উপর অত্যাচার করতে পারেন। রক্তাক্ত করতে পারেন নাবালক ছাত্রদের। সকভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর নিন্দার ঝড় উঠেছে অভিভাবক মহল থেকে খোদ শিক্ষক মহলে। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে এর আগেও স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র ছাত্রীকে কে মারধর করেছেন এই শিক্ষক। কেউ কোন অপরাধ করলেই নির্মমভাবে মারধর করাই ছিল জহরলালবাবুর অন্যতম শাস্তির বিধান।
অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষক জহরলাল কোনার তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি কখনো। আহত ছাত্রের দাদা অনুপম বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখুন এর আগে এই জহরলালবাবু স্কুলে কিভাবে অত্যাচার করেছে অন্য ছাত্র ছাত্রীদের উপরে। তাপস কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলেকে এমন মেরেছিল তাকে ১৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। ওই শিক্ষক কে সাসপেন্ড করা হয়েছিল এরপর। পরে স্কুলে যোগ দিয়ে স্কুলেরই এক ছাত্রীকে চড় মেড়ে অজ্ঞান করে দিয়েছিল। তার অপরাধ ছিল ওই ছাত্রী জহরলাল বাবুর মোটর সাইকেলে পা দিয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সৌভিকের বাবা পেশায় টোটো চালক প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ছেলেকে যেভাবে মেরেছে গরু ছাগল কেও ওই ভাবে কেউ মারেনা। ছেলে আজও যন্ত্রনায় সোজা হয়ে হাটতে পারছে না। ডাক্তার দেখালাম। আমি অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’
নিগৃহীত ছাত্র সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে, ‘আমার ক্লাসের একটি ছেলে সায়ন্তন সাঁই এর ব্যাগটা পড়ে গিয়েছিল। জহরবাবু ক্লাসে এসে ব্যাগটা তুলতে বলে। আমি স্যার কে শুধু বলেছি ব্যাগটা আমার নয়। এরপরেই উনি চড় থাপ্পর মারতে থাকেন। টিফিনের আগে ক্লাস থেকে বের করে রোদে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেন। আমি দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে একজন আমাকে এসে বলে দিদিমনি ডাকছে। সেই শুনে আমি স্টাফরুমের কাছে গেলে উনি দেখতে পেয়ে কেন আমি গিয়েছি সেই কারনে উইকেট দিয়ে পেটে, পায়ে মুখে মারে, এমনকি উইকেট দিয়ে তল পেতে খোঁচাও মারেন। তখন অনান্য স্যাররা, দিদিমনিরা এসে আমাকে উদ্ধার করে।’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) হুমায়ুন বিশ্বাস বলেন, ‘যাই হয়ে থাকুক এভাবে মারধর করাটা একজন শিক্ষকের কোন অবস্থাতেই উচিত হয়নি। সব শুনেছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হবে।’