ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: নিজের মাকে নৃশংসভাবে খুন করে ঘরের মেঝেতে গর্ত করে পুঁতে দিয়েছিল ছোট ছেলে শহিদুল সেখ। প্রায় তিন বছর পর সেই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আনে শহিদুলেরই স্ত্রী সুকরানা বিবি। আর এরপরই বর্ধমান থানায় শহিদুলের বিরুদ্ধে মাকে খুনের অভিযোগ দায়ের করে বড় ছেলে কিসমত আলী। অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার পুলিশ গ্রেপ্তার করে শহিদুল সেখ কে। মঙ্গলবার ধৃতকে বর্ধমান আদালত পেশ করে নিজেদের হেফাজতে নেয় বর্ধমান পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে বুধবার সকালে শহিদুলের দেখানো জায়গা খুঁড়ে উদ্ধার হয় নরকঙ্কাল। আদপেই তা সুকরানা বিবির কিনা তা জানতে মৃতদেহের হাড় ও মাথার খুলি অংশ সহ বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। একইসঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষাও করানো হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার সকালে বর্ধমান আদালতের নির্দেশে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট তথা বর্ধমান সদর ১নং ব্লকের বিডিও মৃণালকান্তি ঘোষের নেতৃত্বে বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে বর্ধমানের হটুদেওয়ান পীড়তলা ক্যানেলপাড় এলাকায় ধৃত সেখ শহিদুল ওরফে নয়নের বাড়িতে ঘরের মেঝে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস নাগাদ মাকে মাথায় মুগুর দিয়ে মেরে শ্বাসরোধ করে খুন করে শহিদুল ওরফে নয়ন সেখ। এরপর তার বাড়ির দুটি ঘরের মধ্যে যে ঘরে মা সুকরানা বিবি (৫৮) ( শহিদুলের স্ত্রীর নামও সুকরানা বিবি) থাকতেন সেই ঘরের মেঝেতে গর্ত করে মায়ের মৃতদেহকে বসানো অবস্থায় পুঁতে দেন নয়ন।
এদিকে দীর্ঘদিন মায়ের কোনো খোঁজ না মেলায় বর্ধমান থানায় ওই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে নিখোঁজ ডায়রী করেন সুকরানা বিবির বড় ছেলে কিসমত আলি। যদিও কিসমত আলির স্ত্রী মিলি বিবি জানিয়েছেন, সেই সময় নয়ন জানিয়েছিল মা কাউকে না বলেই কোথাও চলে গেছেন। ঘুণাক্ষরেও মাকে খুন করার কথা জানায়নি সে। অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হয় সোমবার। নয়নের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুকরানা বিবি নয়নের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে বাপের বাড়ি চলে যান। তাকে ফিরিয়ে আনতেই ভাতারের এড়ুয়ারে যান কিসমত আলি এবং মিলি বিবি। তখনই নয়নের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সুকরানা বিবি জানান, নয়ন তার মা সুকরানা বিবিকে খুন করে ঘরের মেঝেতে পুঁতে দিয়েছে।
এমনকি তাকেও মারধর করত নয়ন। কিছু বললেই সে হুমকি দিত মায়ের মত তাকেও মেরে পুঁতে দেবে। আর সেই ভয়েই সে স্বামীকে ছেড়ে একমাত্র কন্যা সন্তান কে নিয়ে চলে যান বাপের বাড়ি। বড় ভাসুর কিসমত আলী এবং বৌদি মিলি বিবি কে জানিয়েও দেন তিনি যে আর নয়নের সংসারে তিনি ফিরতে চাননা। উল্লেখ্য, নয়নের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গেও ঝামেলার জেরে তিনি অনেকদিন আগেই নয়নকে ছেড়ে চলে যান ঝাড়খণ্ডে। এরপর মাকে খুন করার প্রায় ৬ মাস পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন ভাতারের এড়ুয়ারের সুকরানা বিবিকে। এদিকে, নয়নের স্ত্রী সুকরানা বিবির বক্তব্য শোনার পর মঙ্গলবার সকালে কিসমত আলি পাড়া প্রতিবেশীকে নিয়ে নয়নকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখনই সে মাকে খুনের কথা স্বীকার করে। এই ঘটনায় পুলিশ নয়নকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের নির্দেশে বুধবার সকালে নয়নের দেখানো জায়গায় খুঁড়ে উদ্ধার হয় নরকঙ্কাল।
যদিও এদিন পুলিশী ঘেরাটোপে থাকা নয়ন জানিয়েছে, মা খারাপ পথে চলে গেছিল বলেই রাগের মাথায় খুন করে ফেলেছেন তিনি। নয়নের দাবী ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ সে খুন করে মাকে। যদিও নয়নের এই দাবী মানতে চাননি পরিবারের সদস্যরা। পেশায় গাড়ি চালক নয়নের আচরণ নিয়েও এদিন অনেক প্রশ্ন উঠেছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, যেখানে মাকে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল সেখানে প্রতিদিনই ধুপ দিত নয়ন। এদিন নয়ন জানিয়েছে, মাকে খুন করে সে অনুতপ্তও, কেঁদেওছেন।
এদিন পুলিশ নিযুক্ত সেখ আনিশ যিনি গর্ত থেকে কঙ্কাল উদ্ধার করেন, তিনি জানিয়েছেন, মৃতদেহ কে বসানো অবস্থায় রাখা হয়েছিল। হাড়, মাথার খুলি ছাড়াও পাওয়া গেছে সোনার একটি কানের দুল এবং দুটি বালা। এদিন মৃত সুকরানা বিবির বড়ছেলে কিসমত আলি জানিয়েছেন, তাঁর ভাইয়ের এই অপরাধের ঘটনায় তিনি তার যাবজ্জীবন সাজা চান। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্ত আরও বাড়িয়ে নিয়ে যেতে ধৃত নয়নকে ১০ দিনের পুলিশী হেফাজতের আবেদন জানিয়ে এদিন তাকে আদালতে পেশ করা হয়েছে।