গলসীর বিজেপি প্রার্থী বদল, তপন বাগদির পরিবর্তে নতুন নাম বিকাশ বিশ্বাস, চাঞ্চল্য
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব ঘোষণা মতই নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেও মাঝপথেই ফিরে যেতে হল গলসীর বিজেপি প্রার্থী তপন বাগ্দীকে।
রীতিমত দলীয় সমর্থকদের সঙ্গে সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি চলেও এসেছিলেন সোমবার দুপুরে বর্ধমানের কালেক্টরেট ভবনে। কালেক্টরেট ভবনের মূল গেট পেরিয়ে তিনি যখন মূল ভবনের গেটে এসে দাঁড়ালেন ঠিক তখনই তাঁর মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। অন্য প্রান্ত থেকে ফোনে তাঁর স্ত্রী জানালেন, টিভিতে গলসীর প্রার্থী বদলে দেবার খবর দেখাচ্ছে। তপন বাগ্দীর বদলে বিকাশ বিশ্বাসকে প্রার্থী করেছে বিজেপি।
স্ত্রীর এই কথা শুনেই হতাশায় ভেঙে পড়েন তপন বাগ্দী। কালেক্টরেট ভবনের গেটে এক পা দিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে সেই পা নামিয়ে নিলেন। এরপর দলের দুই প্রস্তাবককে ঘটনার কথা জানিয়ে দ্রুত কালেক্টরেট ভবন ছেড়ে বেড়িয়ে যান তিনি। যেতে যেতে বলে গেলেন, তাঁর বদলে অন্য কাউকে প্রার্থী করা হয়েছে। এমনটা হবার তো কথা ছিল না। তাই তিনি ফিরে যাচ্ছেন দলীয় কর্মীদের নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
আর তপন বাগ্দীর প্রার্থী বদল হবার এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই গোটা জেলা জুড়েই আদি বিজেপি ও নব্য বিজেপির সংঘাতের সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে গেল। উল্লেখ্য, সোমবারই বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রেস বিবৃতি দিয়ে গলসীর এই প্রার্থী বদলের কথা জানানো হয়েছে। তপন বাগ্দীর পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে কাঁকসার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক বিকাশ বিশ্বাসকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি তিনি এই কয়দিনে তপন বাগ্দীর সমর্থনে প্রচারাভিযানও করেছেন।
তাঁকে প্রার্থী করায় বিকাশ বিশ্বাস জানিয়েছেন, তিনি জানেনই না তাঁকে প্রার্থী করা হবে বলে। এটা তাঁর কাছে অনভিপ্রেত। তপন বাগ্দীর বদলে তাঁকে প্রার্থী করায় বিজেপির শিক্ষক সেলের এই নেতা জানিয়েছেন, এব্যাপারে তপন বাগ্দীর সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে, গলসীর বিজেপি প্রার্থীকে বদল করার পরই বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও তীব্র আকার নিল। উল্লেখ্য, গত শুক্রবারই তপন বাগ্দী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন বিজেপির সদর কার্যালয়ে তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্রজিত সিংহ অহলুবালিয়া এবং জেলা সভাপতি অভিজিত তা তাঁকে প্রার্থী হিসাবে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তপন বাগ্দীর বিরুদ্ধে একটি শ্লীলতাহানির মামলা থাকার কারণেই তাঁকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু তপন বাগ্দীর দাবী, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বিচারাধীন বিষয়। এমনকি তাঁর দাবী, তাঁর বিরদ্ধে তৃণমূল মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। এমতবস্থায় তিনি প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করবেন না। প্রয়োজনে তিনি নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করবেন। এমনকি তপন বাগ্দী হুমকিও দেন, এরকমটা হলে তিনি বিজেপি সদর কার্যালয়ে গিয়ে আত্মাহুতি দেবেন। এদিকে, শুক্রবারের এই ঘটনার পর সোমবার তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেই ফেরত যাওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
অন্যদিকে, তপন বাগ্দীর পরিবর্তে শিক্ষক বিকাশ বিশ্বাসকে প্রার্থী করায় রীতিমত জোড়া ফুল শিবিরে অশনি সংকেত মিলতে শুরু করল। এদিনই গলসীর একাধিক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, বিকাশ বিশ্বাস প্রার্থী হওয়ায় জেতার ক্ষেত্রে তাঁদের অসুবিধা হবে। যেটা তপন বাগ্দী প্রার্থী থাকায় তাঁদের অনেকটাই সুবিধা হয়েছিল সেই সুবিধা আর হবে না। তপন বাগ্দীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা সহজ ছিল যা পরিবর্তিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে হবে না। অন্যদিকে, বিজেপি এবং তৃণমূলের এই রসায়ন প্রক্রিয়ায় এবার জয়ের সূর্য দেখতে শুরু করেছেন গলসীর ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নন্দলাল পণ্ডিত। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর বিজেপির এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সাধারণ ভোটাররা বীতশ্রদ্ধ। তাঁরা চান গলসীতে একটি শান্তির বাতাবরণ। আর তাই এবার তাঁকেই নির্বাচিত করতে চলেছেন গলসী বিধানসভার ভোটাররা।