ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়ে গেছে। কিন্তু ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই পূর্ব বর্ধমান জেলার ১৬টি বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। কার্যত ঘরে এবং বাইরেও। একদিকে মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি। তার সঙ্গে রয়েছে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী। বাইরের ভোট ভাগাভাগির অংক যেমন কষছেন তৃণমূল প্রার্থীরা তেমনি খোদ নিজের দলের অন্তর্ঘাত নিয়েও রীতিমত শংকিত হয়ে রয়েছেন প্রার্থীরা।
গলসী বিধানসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে নেপাল ঘড়ুইকে। ইতিমধ্যেই বহিরাগত প্রার্থী হিসাবে দলেরই একাংশের মধ্যেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর রয়েছে গলসী বিধানসভা এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপির রীতিমত বাড়বাড়ন্ত। ছোট থেকে বড় সমস্ত শাসকদলের নেতাই বলছেন গলসী এবার সত্যিই ‘টাফ’ সিট। তাহলে তা জেনেও কেন বহিরাগত নেপাল ঘড়ুইকে গলসীতে প্রার্থী করা হল – হিসাব মেলাতে পারছেন না তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কারণ এই নেপাল ঘড়ুই রায়না বিধানসভায় প্রায় ৫৫ হাজার ভোটে জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর সেই জায়গায় এবার প্রার্থী করা হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়াকে।
শম্পা ধাড়ার বাড়িও এই রায়না বিধানসভা এলাকাতেই। সেক্ষেত্রে তিনি বাড়তি কিছু সুবিধা পেলেও দলের একটা বড় অংশ ক্ষোভে ফুঁসছে। নেপাল ঘড়ুইকে সরিয়ে দেওয়া অনেকেই মানতে পারছেনা। তার ওপর রয়েছে বিজেপি এবং সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী। বলা বাহুল্য বর্ধমান দক্ষিণ দামোদর (রায়না এবং খণ্ডঘোষ বিধানসভা) দীর্ঘকাল ধরেই বামেদের অটুট দুর্গ হিসাবে পরিচিত ছিল। খোদ সিপিএমের মাঠেঘাটে থাকা নেতারাই এবার বলছেন, অনেকেই ভাবছেন সিপিএম শেষ হয়ে গেছে, এবার সিপিএমের নব অভ্যুত্থান টের পাবে শাসকদল।
কি সেই অভ্যুত্থান? সিপিএম নেতারা বলছেন যেখানে যেখানে তাঁরা জিততে পারবেন সেটা ছাড়া বাকি প্রায় সব আসনেই সিপিএমের ভোট এবার বিজেপির দিকে সুইং করবে। এদিকে, শুধু গলসী, রায়না বা খণ্ডঘোষই নয়, রীতিমত সিঁদুরে মেঘ দেখছেন প্রায় সমস্ত তৃণমূল প্রার্থীই। প্রার্থী তালিক ঘোষণার আগে যাঁরা রীতিমত লাফালাফি করেছিলেন – এখন দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই তাঁদের নার্ভের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। যদিও প্রকাশ্যে কেউই তা স্বীকার করতে চাইছেন না। কিন্তু অস্বীকারও কেউ করতে পারছেন না। দলের আভ্যন্তরীণ অন্তর্ঘাতের কথা স্বীকার কেউ কেউ না করলেও এবারের প্রার্থী তালিকা নিয়ে যে দলের মধ্যে চরম ক্ষোভ চলছেই তা তাঁরাও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
খোদ বর্ধমান শহর তথা বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র আকার নিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে রবিবার রসিকপুর এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে ফ্লেক্স, ফেষ্টুন টাঙাতে দলীয় কর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে বের হতে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্ধমান থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে হাজির হয়। যদিও তেমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। ভয় ছিল যদি বিক্ষুব্ধরা হামলা চালায়। অন্যদিকে দলেরই জেলা এবং শহরের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কে প্রার্থী ঘোষণার পরও ময়দানে দেখা যাচ্ছে না। এই নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে।
যদিও তৃণমূল প্রার্থী খোকন দাস সকাল থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন সমস্ত বিভেদ ভুলিয়ে সকলকে নিয়ে নির্বাচনে ঝাঁপাতে। সকাল থেকে রাত যখনই সময় পাচ্ছেন প্রচারের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর বিক্ষুব্ধ বলে পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করছেন, অনুরোধ করছেন বিভেদ ভুলে এগিয়ে আসার। কিন্তু আদপেই কি তাতে কোনো কাজ হচ্ছে বা হবে? জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা জানিয়েছেন, দিন যত এগিয়ে আসবে ততই এই সমস্ত বিভেদ ভুলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। কেউই মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবেন না। আর নেতৃত্বের এই আশ্বাস বাণীই এখন প্রার্থীদের মনোবল কে চাঙ্গা