ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে রাজ্য মৎস দপ্তরে চাকরি করে দেবার নাম করে প্রতারণা করার অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেসের শিক্ষা বন্ধু সংগঠনের রাজ্য সহ সভাপতি সীতারাম মুখার্জ্জীকে গ্রেপ্তার করল বর্ধমান থানার পুলিশ। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল বর্ধমান জুড়ে। বুধবার বিকালে আলমগঞ্জের প্রান্তিক বাজার এলাকা থেকে তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃতের বাড়ি বর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার বেড় মোড় এলাকায়।
সীতারামবাবু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিনটেনডেণ্ট হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি অবসর নিয়েছেন। কিন্তু এখনও তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষা বন্ধু সমিতির রাজ্য সহ সভাপতি হিসাবে রয়েছেন। তাঁর এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করে দেবার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি বছর খানেক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজবাটি চত্বরে ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের সময় সীতারামবাবুর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো নিভিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল ছাত্রছাত্রীদের।
উল্লেখ্য, সীতারামবাবুর স্ত্রী রীতা মুখার্জ্জী বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র সুপারিনটেনডেণ্ট টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যাণ্ট পদে কর্মরত এবং বিজেপি সমর্থিত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনের পদাধিকার হিসাবে রয়েছেন। এমনকি সীতারামবাবুর ছেলে দীপাঞ্জন মুখার্জ্জীও টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যাণ্ট পদে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েই কর্মরত। খোদ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতারামবাবু অবসর নেবার পর তাঁকে এক্সটেনশন দেবার জন্য খোদ বীরভূমের এক মন্ত্রী সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সমর্থিত বর্ধমান ইউনিভার্সিটি কর্মচারী সমিতির প্রবল বাধায় তাঁর সেই সুপারিশ কার্যকর হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বীরভূমের রামপুরহাট থানার নারায়ণপুরের যুবক রিঙ্কু দাসকে মৎস্য দপ্তরে চাকরি করে দেবার নাম করে ৫ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সীতারামবাবুর বিরুদ্ধে। ওই যুবক বর্ধমান আদালতে এব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন। সিজেএম কেস রুজু করে তদন্তের জন্য বর্ধমান থানার আইসিকে নির্দেশ দেন।
আদালতে রিঙ্কু জানিয়েছেন, বেকার হওয়ার সুবাদে তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করছিলেন। সীতারামবাবু নিজেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংগঠনের সেক্রেটারী হিসাবে পরিচয় দেন। ওই যুবক জানিয়েছেন, তাঁকে মৎস্য দপ্তরে চাকরি করে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে ১২ লক্ষ চান সীতারামবাবু। অগ্রিম বাবদ তাঁর কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। দু’মাসের মধ্যে তাঁর চাকরি হবে বলে জানানো হয়। মাস দু’য়েক পর তাঁর বাড়িতে মৎস্য দপ্তরের একটি নিয়োগপত্র পৌঁছায়। খোঁজখবর নিয়ে সেটি জাল বলে জানতে পারেন তিনি। এরপর বহুদিন কেটে গেলেও তাঁর চাকরি হয়নি। টাকাও ফেরত দেননি সীতারাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রিঙ্কুকে একটি চেক দেন সীতারাম। অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় সেটি বাউন্স করে। সীতারামের বিরুদ্ধে কয়েকটি চেক বাউন্সের মামলা রয়েছে বলে আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার ধৃত সীতারাম মুখার্জ্জীকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হলেও তাঁকে পুলিশ হেফাজতের জন্য আবেদন জানায়নি পুলিশ। ধৃতের হয়ে জামিনের জোরদার সওয়াল করেন ধৃতের আইনজীবী স্বপন বন্দোপাধ্যায়। পাল্টা সওয়াল করেন সরকারী আইনজীবী নারদ কুমার ভুঁইঞা। দুপক্ষের সওয়াল শুনে সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা তাঁকে জেলা হেফাজতে পাঠিয়ে আগামী ১৯ মার্চ ফের আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেন।