ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসী থানার অন্তর্গত চান্না গ্রামে বিশালাক্ষী মন্দিরে গত মঙ্গলবার রাত্রে চুরির ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে গলসী থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মন্দিরের মূল ফটকের ৮টি তালা ভেঙ্গে দুষ্কৃতীরা চুরি করে। তবে চুরির বিষয়ে এলাকার কেউ কিছুই জানাতে পারেননি। যদিও মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেশ কিছু রুপোর থালা, বাসন, ঠাকুরের আনুষঙ্গিক জিনিস সহ প্রনামী বাক্সের টাকা পয়সা চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। বুধবার ঘটনাস্থলে আসে গলসি থানার পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সেব্যাপারে তদন্ত করছে গলসি থানার পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে চান্না গ্রামের এই জাগ্রত বিশালাক্ষী মন্দির নিয়ে বহু মিথ প্রচলিত আছে এলাকায়। জানা যায়, একসময় সাধক কমলাকান্ত এই গ্রামে এসেই সাধনায় ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁর জন্মস্থান ছিল পূর্ব বর্ধমানের কালনার সেন পাড়া। চান্না গ্রামের বিশালাক্ষী প্রতিষ্ঠার পিছনে কমলাকান্তের ভূমিকা ছিল। কমলাকান্তের নানান অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানতে পেরে তৎকালীন বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ তাঁর সানিধ্যে আসেন। পরবর্তীকালে তেজচাঁদের পুত্র প্রতাপচাঁদ কমলাকান্তের সানিধ্যে আসেন। রাজ পরিবারের সানিধ্যে এসে কমলাকান্ত কে বর্ধমানের বোরহাটে রাজ পরিবারের তরফ থেকে তাঁর সাধনা করার জন্য মন্দির তৈরি করে দেওয়া হয়। আজ যা কমলাকান্তের মন্দির নামে খ্যাত। আজও চান্না গ্রামে কমলাকান্তের সাধনা ভিটে রয়েছে। পরবর্তীতে কালনার এক ওষুধ ব্যবসায়ী সুব্রত সাহা কমলাকান্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই বিশালাক্ষী মন্দিরকে ঢেলে সাজিয়ে সৌদর্যায়নের ব্যবস্থা করেন। খড়ি নদীর ধারে মনোরম পরিবেশে আজ এই মন্দির সাধারণের দর্শনীয় স্থান। প্রতি রবিবার কালনার সেই ওষুধ ব্যবসায়ী এই মন্দিরে আসেন বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির পদাধিকারী গুসকরার বাসিন্দা সুব্রত সাম।
গ্রামের মানুষের কাছে জানা গেছে, বছর খানেক আগে এই মন্দিরে একটি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। তারপর গলসী থানার পক্ষ থেকে মন্দির চত্বরে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়। এমনকি সি সি ক্যামেরাও লাগানো হয়। কারণ দেবীর শরীরে অনেক মূল্যবান অলংকার থাকতো। মূলত সেই সমস্ত গহনার সুরক্ষার কারণেই পুলিশের পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যদিও সমস্ত সোনার গহনা নিরাপত্তার তাগিদে মন্দিরের সেবাইত এর কাছে গচ্ছিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু মন্দিরের অবস্থান গ্রামের এক প্রান্তে হওয়ায় এই মন্দিরের সুরক্ষা একপ্রকার খোলামেলাই থাকে। এর আগে যখন সি সি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল, জানা গেছে সেগুলো আচমকাই স্বাভাবিক ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণ কেউ অনুসন্ধান করে বের করতে পারেনি। এমনকি মন্দির চত্বরে বা এলাকায় আলোরও কোনো ব্যবস্থা নেই। মন্দিরে নিয়ম করে কেবল সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা রয়েছে। এসবই দেবীর নির্দেশ মেনেই নাকি হয়। ফলে বড় গ্রাম, খোলা জায়গা ইত্যাদির কারণে এই মন্দির এলাকা কার্যত অসুরক্ষিতই থাকে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এর আগেও এই মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিছু ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থাই ধোপে টেকে নি। তবে মন্দিরে চুরির ঘটনা ঘটার পর থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। আর তারই ভিত্তিতে চুরির তদন্ত শুরু করা হয়েছে।