ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: বর্ধমানের মেমারী ১ ব্লকের চাঁচাই রেল ষ্টেশন সংলগ্ন সরডাঙা রেলগেটকে (৬৩ – সি -ই -২) রেল দপ্তরের পক্ষ থেকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালো গোটা এলাকায়। রেল দপ্তরের এই ঘোষণায় সরডাঙা, চাঁচাই প্রভৃতি গ্রামের মানুষজন গত ১৪দিন ধরে লাগাতার বিক্ষোভ শুরু করেছেন রেলগেট এলাকায়।
চাঁচাই গ্রামের বাসিন্দা মান্না মিত্র জানিয়েছেন, ২০১০ সালে চাঁচাই রেলগেট সংলগ্ন এই রাস্তাটিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরী করা হয়। ২০১৫ সালে এই রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল এলাকার ৪টি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। এছাড়াও বড়শুল জুট মিলের একটি বাস যা মিলের শ্রমিকদের নিয়ে সারাদিনে ৪বার যাতায়াত করে এই রাস্তা রেলগেট পেরিয়েই।
রয়েছে প্রায় ১৩টি ট্রেকার সার্ভিসও। এরই পাশাপাশি রয়েছে প্রতি মূহূর্তে মালবাহী লরী, ট্র্যাক্টরের যাতায়াত। সর্বপরি এই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে চাঁচাই বাজার সহ রেল লাইনের এপার ওপার মিলিয়ে প্রায় কয়েকশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। সবমিলিয়ে এই রাস্তার গুরুত্ব ক্রমশই বাড়ছে। মান্নাবাবু জানিয়েছেন, হঠাতই তাঁরা দেখেন রেল দপ্তর থেকে নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় ১৩ ফেব্রুয়ারী থেকে এই রেলগেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
এই নোটিশ দেখার পরই গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ জানান। রেল দপ্তরের এই নির্দেশিকাকে তুলে নেবার জন্য ইতিমধ্যেই পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সহ সমস্ত স্তরে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। গোটা ঘটনা জানানো হয়েছে জেলাশাসকের কাছেও। কিন্তু এরই মাঝে হঠাতই গত ২০ ফেব্রুয়ারী রেলদপ্তর এই রেলগেটকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ করার জন্য কাজ শুরু করে।
বিষয়টি গ্রামবাসীদের নজরে আসার পরই শুরু হয়েছে ২৪ঘণ্টা ব্যাপী ধর্ণা। রেলগেটের পাশেই এখন চলছে এই ধর্ণা মঞ্চ। মান্নাবাবু জানিয়েছেন, রেল দপ্তর থেকে তাঁরা জেনেছেন সরডাঙার এই রেলগেটকে বন্ধ করে দিয়ে মশাগ্রাম রেলগেট দিয়ে যাতায়াত করার জন্য রেল লাইনের ধার বরাবর একটি রাস্তা তৈরী করে দেওয়া হবে। কিন্তু সরডাঙা রেলগেট থেকে মশাগ্রাম রেলগেটের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। ফলে এলাকার মানুষকে প্রচুর রাস্তা ঘুরে যেতে হবে। তাই তাঁরা রেল দপ্তরের কাছে এই নির্দেশ তুলে নেবার আবেদন জানিয়েছেন।
মেমারীর পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকার জানিয়েছেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তাটি। এই রাস্তার ওপর দিয়েই বড়শুল থেকে সমস্ত বালির গাড়ি যাতায়াত করে। ২নং জাতীয় সড়ক থেকে প্রায় ১ কিমি এই সরডাঙা রেলগেটকে বন্ধ করে দিলে গোটা সরডাঙা, চাঁচাই সহ আশপাশের একাধিক গ্রামের মানুষ যেমন একদিকে সমস্যায় পড়বেন পাশাপাশি কর্মসংস্থান হারাবেন অনেকেই। তাই তাঁরাও চান রেল দপ্তর তাঁদের এই সিদ্ধান্ত তুলে নিক।
সন্দীপনবাবু জানিয়েছেন, রেল এই সিদ্ধান্ত নিলেও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি বলে তাঁরা জেনেছেন। কিভাবে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা না বলেই একটি দীর্ঘকালের রাস্তাকে এভাবে অবরুদ্ধ করে দিতে পারে রেল দপ্তর? এদিকে, রেল দপ্তরের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি রেলদপ্তর বলে জানিয়েছেন মেমারী তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক নার্গিস বেগম।
তিনি জানিয়েছেন, মানুষের অসুবিধা করে এভাবে রেলদপ্তর এককভাবে কিছু করতে পারে না। তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। সাধারণ মানুষের অসুবিধা হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। অন্যদিকে, মেমারী ১নং বিডিও বিপুল কুমার মণ্ডল জানিয়েছেন, এব্যাপারে রেল দপ্তর তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। তবে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে তিনি শুনেছেন।
অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, মাস খানেক আগে রেল দপ্তর একাধিক রেলগেট নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেছে। তবে তার মধ্যে এই সরডাঙা রেলগেটটি ছিল কিনা তিনি মনে করতে পারছেন না। অপরদিকে, এব্যাপারে পূর্ব রেল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রেল মন্ত্রক সমস্ত রেলগেটগুলিকে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মূলত রেলের যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। এব্যাপারে রেলদপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট রেলগেটগুলিকে যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করে দিতে হবে।
উল্লেখ্য, পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন এই নির্দেশিকা অনুসারে ২০১৬ সালের মধ্যে এই ডিভিশনের প্রায় ৫টি গেটম্যানহীন রেলগেটকে ইতিমধ্যে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি রেলগেটে স্বল্প উচ্চতার আণ্ডারপাশও করে দেওয়া হয়েছে। রেল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ধাপে ধাপে রেলমন্ত্রক সমস্ত ডিভিশনেই এই নির্দেশ কার্য্যকরী করার পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
এব্যাপারে পূর্ব রেলের সিপিআরও নিখিল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, রেল মন্ত্রক রেলের নিরাপত্তা ও যাত্রী সুরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতেই সমস্ত রেলগেটগুলিকে বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন যেখানে যেমন সেখানে তেমনভাবে যত দ্রুত সম্ভব এই নির্দেশ কার্য্যকরী করার জন্য। সেক্ষেত্রে সরডাঙা রেলগেটটিও রয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, রেল দপ্তরের নির্দেশ অনুসারে কাছাকাছি থাকা রেলগেটগুলিকে যতটা সম্ভব বন্ধ করে সম্ভাব্য সবিধাযুক্ত রেলগেটের সঙ্গে সেই রাস্তাগুলিকে সংযুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি কোথাও আণ্ডারপাশ আবার কোথাও ওভারব্রীজ করাও হচ্ছে ধাপে ধাপে।