চীনা দ্রব্য বয়কট নিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত, বাস্তবে তা কতটা সম্ভব দ্বিধাগ্রস্থ খোদ ব্যবসায়ী মহল

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: চলতি সময়ে করোনা নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল আর আতংকে দিশেহারা। কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো সরকারই কার্যত করোনার চিকিত্সা নিয়ে সদুত্তর দিতে পারছে না, সেই সময় করোনা থেকে মুখ ঘোরাতেই চীনা দ্রব্য বয়কটের মত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ফের সেই অহিংস আন্দোলনের সুরেই চীনা দ্রব্য বয়কটের আওয়াজ উঠেছে গোটা দেশ জুড়ে। শুরু হয়ে গেছে জায়গায় জায়গায় চীনা দ্রব্য পুড়িয়ে প্রতিবাদ । বিজেপি, তৃণমূলের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ভারতের ওপর চীনা হামলার ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর এখন গোটা রাজ্য। যদিও আদপেই এই বয়কট কতটা করা সম্ভব তা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক দেখা দিয়েছে। 
শুক্রবার বর্ধমান জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বেশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁরা গোটা জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদন রেখেছেন চীনা দ্রব্য বিক্রি না করার জন্য। তাঁরা ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন, নতুন করে কোনো ব্যবসায়ী যাতে চীনা দ্রব্য না কেনেন। যেহেতু ইতিমধ্যেই বহু ব্যবসায়ী মোটা পুঁজি লাগিয়ে বিভিন্ন চীনা দ্রব্যকে মজুদ করেছেন, সেগুলি কি করবেন তা নিয়ে বিরাট দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। 
এদিকে, খোদ ব্যবসায়ী মহলের দাবী, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কমবেশি প্রতিটি বাড়িতেই ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশেরও বেশি চীনা দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন যে ওষুধের প্রয়োজন হয় তারও কাঁচামালের ৬০ – ৭০ শতাংশ আসে চীন থেকে। ফলে ওষুধ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও সেই একই চিন্তা দেখা দিয়েছে। ওষুধের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে বা বিশেষতই মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে চীনা প্রভাব ৮০ শতাংশেরও বেশি। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই বয়কটের প্রসঙ্গে কার্যত দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়িমহল।
পূর্ব বর্ধমান চেম্বার অব ট্রেডার্সের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব জানিয়েছেন, বর্ধমানের ব্যবসায়ীদের কাছে চীনা সামগ্রী বয়কট করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরাও। প্রসঙ্গত শুধু ওষুধ শিল্পেই নয়, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স জগতে, খেলনা সহ গৃহস্থালী সরঞ্জাম, গৃহসজ্জাতেও আজ রীতিমত সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে চিনা দ্রব্য। কাপ-ডিস থেকে হাতের মোবাইল ফোন – এমনকি শিশুদের খেলনাও এখন চীন থেকে আমদানী করা হয়। ফলে এগুলিকে বয়কট করতে গেলে রীতিমত অর্থনীতিতে ধ্বস নামতে বাধ্য।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর গোস্বামী জনিয়েছেন, ভারতবর্ষে জিএসটি, নোটবন্দি প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে অর্থনীতিতে ধ্বস অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এখন করোনা আবহে সেই ধ্বস আরও চওড়া করেছে। চলতি সময়ে করোনা নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল আর আতংকে দিশেহারা। কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো সরকারই কার্যত করোনার চিকিত্সা নিয়ে সদুত্তর দিতে পারছেন না, সেই সময় করোনা থেকে মুখ ঘোরাতেই চীনা দ্রব্য বয়কটের মত মুর্খ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, একদিকে যখন বিশ্বায়নের কথা বলা হচ্ছে সেইসময় কোনো একটি দেশের মালকে বয়কট করার মধ্যে দিয়ে কোনো সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। তিনি জানিয়েছেন, সব থেকে বড় যেটা বিষয় বিছিন্নভাবে বয়কটের আগে কোনো বিদেশী পণ্য ঢোকার ক্ষেত্রে সরকারের উচিত সেটা ঢোকা বন্ধ করা। কিন্তু এখনও সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, ফলে চীনা দ্রব্য বয়কটের মধ্যে দিয়ে এখনই নতুন করে অর্থনীতিতে ধ্বস নামার কিছু নেই। কারণ ভারতীয় অর্থনীতিতে ধ্বস আগেই নেমে গেছে। 
চীনা দ্রব্য বয়কটের যে হুজুগ দেখা দিয়েছে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে কোনো নির্দেশ না আসলেও শুক্রবার জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন খুব শীঘ্রই হয়ত এই ধরণের নির্দেশ চলে আসবে।

আরো পড়ুন