ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: লক্ষ্য বিধানসভা ভোট। আর তার আগে রীতিমত জোর কদমে নিজেদের ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। উল্লেখযোগ্যভাবে এই কাজে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাধান্য দিয়েছেন নিজের দলের একসময়ের দাপুটে, দক্ষ নেতাদের যেমন ফিরিয়ে এনে বিরোধীদের সামনে বড়সড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করা, পাশাপাশি সিপিএম, বিজেপির মতো বিরোধী দলের একসময়ের দৌর্দণ্ডপ্রতাপ, দক্ষ রাজনীতিবিদ দের দলে যোগদান করিয়ে খোদ বিরোধিদলগুলোকে নাস্তানাবুদ করার ছক তৈরি রাখা।
বিজ্ঞাপন
আর এই ছকেরই অঙ্গ হিসাবে বুধবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে খোদ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে দলে যোগদান করালেন একসময়ের সিপিএমের বর্ধমান জেলার দাপুটে নেতা তথা টানা ২৫বছরের বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলার, দুবারের ভাইস চেয়ারম্যান, একবারের চেয়ারম্যান আইনুল হক কে। যদিও সিপিএম থেকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিস্কৃত হওয়ার পর বেশ কয়েকবছর আইনুল হক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। পরে বিজেপিতে যোগদান করেন তিনি। পাশাপাশি, বর্ধমান জেলার বিজেপির ২ বারের বিধানসভার প্রার্থী সুন্দর পাশোয়ানও যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।
যোগ দেওয়ার পর আইনুলবাবু জানিয়েছেন, তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু ওঁদের সঙ্গে খাপ খায়নি তাঁর। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়ংকর যে বিপদ ডেকে আনছে বিজেপি – তা তিনি মেনে নিতে পারেননি। আর তাই দেশের অখণ্ডতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ডাক তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। তাঁর ডাক পেয়েই তিনি আলোচনা করেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটকের পাশাপাশি সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে। আর তার পরেই বুধবার তৃণমূল ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি যোগ দিলেন। তিনি এও জানিয়েছেন, পদের জন্য তৃণমূলে তিনি যাননি। দল যা দায়িত্ব দেবে তিনি পালন করবেন।
উল্লেখ্য, এদিন আইনুলবাবু বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেবার পর জানিয়েছেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনের চরম ভুল। আর সেই ভুলের খেসারত দিতেই তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেন। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে সিপিএম থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। সিপিএম সংস্রব ত্যাগ করার পর তিনি বেশ কিছুদিন চুপ ছিলেন। এরপর ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের হাত ধরে কলকাতায় যোগ দেন। সাম্প্রতিককালে বিজেপির পৌর নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্য কমিটির ৫৭ জন সদস্যের মধ্যে তাঁকেও রাখা হয়। যদিও তিনি জানিয়েছেন, ওই কমিটির কোনো মিটিংয়েই তিনি যাননি। ট্রাডিশান বজায় রেখেই এদিনও তিনি কলকাতাতেই তৃণমূলের রাজ্য সদর দপ্তরে যোগ দিয়ে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিলেন। কারণ গত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বলে বাজারে রটলেও বুধবারই যে তিনি যোগ দিচ্ছেন এদিন সকাল পর্যন্তও জেলার তৃণমূল নেতাদের কাছে কোনো খবর ছিল না। কার্যত জেলা নেতাদের মধ্যে রীতিমত জল্পনা শুরু হওয়ার মাঝেই এদিন তিনি তৃণমূলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন।
জানা গেছে, ১৯৭৪ সাল থেকে বামপন্থী ছাত্র রাজনীতি দিয়ে তিনি রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেন। বর্ধমান পুরসভায় টানা ২৫বছর তিনি কাউন্সিলার ছিলেন। ২বার ভাইস চেয়ারম্যান এবং একবার চেয়ারম্যান ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই দুঁদে রাজনীতিবিদ, দক্ষ প্রশাসক হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে আইনুলবাবুকে বর্ধমান পুরসভার কোনো বড়সড় দায়িত্বে নিয়ে আসা হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে তৃণমূলের রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেও যান তিনি। এরপরই দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এবং শাসকদলের সঙ্গে তাঁর গোপন যোগাযোগের অভিযোগ তুলে তাঁকে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বুধবার তৃণমূল ভবনে আইনুল হকের পাশাপাশি বিজেপির ২ বারের বিধানসভার প্রার্থী সুন্দর পাশোয়ানও যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। জানা গেছে, এদিন বর্ধমান থেকে ২২টি গাড়ির কনভয় ছিল আইনুলবাবুর সঙ্গে। এদিকে, আইনুল হকের বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেবার ঘটনা সম্পর্কে বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, কেন আইনুল হক বিজেপি ছাড়লেন তা তিনি জানেন না। তাঁকে সম্মান দেওয়া হয়েছে। তিনিও কখনও কাউকে অসম্মানিত করেন নি। হয়ত বিজেপির দলীয় অনুশাসন তিনি মানতে পারেন নি।