মূলত চোলাইয়ের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযানের জেরে নাজেহাল মদ্যপায়ীরা ইদানিংকালে দেশী মদের দিকে ঝুঁকছে। কয়েক বছর আগেও বিষমদ খেয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আতংক তৈরি হয়েছিল। বাম আমলে বাম যুব ফ্রণ্টের পক্ষ থেকে একটা সময় লাগাতার রাস্তায় মিছিল, প্রতিবাদ, মিটিং করা হত – যুব সমাজকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য চোলাই মদের কারবারকে বন্ধ করার জন্য আওয়াজ তোলা হত। এখন সে সবই ইতিহাস। উপরন্তু দ্রুতহারে বাড়ছে মদের প্রতি আসক্ততা। পূর্ব বর্ধমান জেলা আবগারী দপ্তরের সুপার নিলয় কুমার সাহা জানিয়েছেন, সরকারীভাবে লকডাউনের জেরে দফায় দফায় মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাঁদের পক্ষ থেকেও লাগাতার দেশী চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবু এই সুরাপ্রেমীদের সংখ্যা গত কয়েকবছরের তুলনায় বেড়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের অভিযানের জেরে চোলাই মদের চোরাগোপ্তা কারবার চালানোতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা অভিযানে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে দেশী চোলাই মদ বাজেয়াপ্ত করছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত ২-৩ বছরের মধ্যে সব থেকে বড় অভিযান চালানো হয়েছে মঙ্গলবার ভোরে। এদিন বর্ধমান সদর আবগারী দপ্তরের আইসি দ্বীপায়ন সিনহার নেতৃত্বে গলসী থানার সারুল গ্রামের দাসপাড়া, বাগ্দীপাড়া, পশ্চিমপাড়ায় অভিযান চালিয়ে চোলাই তৈরীর কাঁচামাল উদ্ধার রয়েছে ২৮০০ থেকে প্রায় ৩ হাজার লিটার। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১০টি মদের ভাটি। উদ্ধার হয়েছে ৩০ কেজি গুড়, ২২৫ লিটার চোলাই এবং ৩৫টি হাঁড়ি।
একইসঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছে বর্ধমান থানার বিজয়রাম এলাকাতেও। এখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৪৬০ লিটার কাঁচামাল এবং ৭টি হাঁড়ি। তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে গোটা জেলায় দেশী মদ বিক্রি হয়েছে ৭ লক্ষ ৬৭ হাজার লিটার, বিদেশী মদ ৩ লক্ষ ১৩ হাজার লিটার এবং বিয়ার বিক্রি হয়েছে ১১ লক্ষ ৮২ হাজার লিটার। এপ্রিল মাসে নির্বাচনের সময়কালে বিক্রি হয়েছে দেশী মদ ৭ লক্ষ লিটার, বিদেশী মদ ২.৫ লক্ষ লিটার এবং বিয়ার ৫.৫ লক্ষ লিটার। মে মাসে বিক্রি হয়েছে দেশী মদ ৫ লক্ষ ১০ হাজার লিটার, বিদেশী মদ ২ লক্ষ লিটার এবং বিয়ার ১ লক্ষ ৮০ হাজার লিটার। উল্লেখ্য, ১৬ মে থেকে প্রথম দফায় ৩০ মে পর্যন্ত আংশিক লকডাউন ছিল। জানা গেছে, এই সময় দোকান বন্ধ থাকায় অনলাইনে মদের বিক্রি বেড়েছে।
জেলা আবগারী দপ্তর সূত্রের খবর মার্চ মাসে অবৈধ চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান গ্রেপ্তার হয়েছে ১৭জন। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১ লক্ষ লিটার কাঁচামাল এবং ১০ হাজার লিটার চোলাই মদ। এপ্রিল মাসে গ্রেপ্তার হয়েছে ২৮জন। কাঁচামাল বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২.৮ লক্ষ লিটার এবং চেলাই বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২১ হাজার লিটার। অন্যদিকে, করোনার প্রকোপ বাড়ায় মে মাসে কোনো গ্রেপ্তার ছিল না। এই মে মাসে কাঁচামাল উদ্ধার হয়েছে ৭০ হাজার লিটার এবং চোলাই উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার লিটার।