টোটোর যানজটে নাজেহাল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী ও পরিবারের লোকজন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের প্রায় সব রাস্তায় টোটোর কারণে যানজটে নাজেহাল অবস্থা শহরবাসীর। এরই মধ্যে মারাত্মক অবস্থা খোসবাগান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাবার রাস্তার। দিনের ব্যস্ত সময়ে মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে মানুষের সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় ৫০মিনিট। তবু বর্ধমান সদর থানার পিছন দিকে খোসবাগানের মুখ থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত গোটা রাস্তায় নেই কোনো ট্র্যাফিক ব্যবস্থা। অন্যদিকে শ্যামসায়রের ঘাট থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অথবা হাসপাতালের ভিতরে যাবার রাস্তার মুখে প্রতিদিন এই টোটোর যানজটে নাজেহাল রোগী ও তার পরিবারের লোকেরা। 

শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, একদিকে খোসবাগানের দিক থেকে হাসপাতালে আসার রাস্তা অন্যদিকে স্টেশনের দিক থেকে পাওয়ার হাউস পাড়া হয়ে রাজ কলেজ কিংবা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে মানুষের। শয়ে শয়ে টোটো রীতিমত রাস্তা দখল করে থাকছে। নির্দিষ্ট সময়ে রোগীকে নিয়ে হসপিটাল পৌঁছতে পারছে না এম্বুলেন্স ও রোগীর পরিবারের লোকজন। দিনের পর দিনের এই দুর্বিষহ অবস্থা চলতে থাকলেও ভ্রুক্ষেপ নেই কারুর।

মঙ্গলবার বিকালে শশঙ্গা এলাকা থেকে হাসপাতালে আসছিলেন সন্তান সম্ভবা আয়েশা খাতুন। খোসবাগান থেকে একটু এগিয়ে শ্যামসায়র ঘাটের কাছে টোটোর জটে আটকে যায় তাঁকে নিয়ে আসা মারুতি ভ্যানটি। প্রসব যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকা আয়েশা শেষ অবধি ভ্যানেই প্রসব করেন একটি পুত্র সন্তানের। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। মা ও ছেলে দুজনেই ভালো আছেন। আয়েশার মা রুবিনা খাতুন বলেন, ‘এমনটা হবার কথা ছিল কি? মেয়েটা প্রসব যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছিল, তাও আমাদের গাড়িটা এগোতে পারেনি। কিছু ক্ষতি হলে দায় কে নিত ? প্রশাসনের এই দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন।’

এ যন্ত্রনার ছবি নিত্যদিনের। প্রতিদিনই এভাবেই কোন না কোন রোগীর পরিবার বা রোগী সমস্যায় পড়ছে টোটোর যানজটে আটকে পড়ে। কয়েকশো টোটো এক সঙ্গে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। প্রায়ই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে কোনো যানবাহনই সেইসময় নড়াচড়া করতে পারে না বেশ কিছুক্ষণ। ফলে তৈরী হচ্ছে চরম সমস্যা। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘এই সমস্যার কথাগুলো ভেবেই আমরা বেশ কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি টোটো নিয়ে। খোঁজ নিয়ে দেখেছি এই রাস্তায় বেশীরভাগ টোটো পঞ্চায়েত থেকে এসে ভিড় করছে। সারাদিন এখানে টোটো চালিয়ে রাতে গ্যারাজে গাড়ি রেখে আবারও পরের দিন চলে আসছে। এইসব আর চলবে না। রোগী নিয়ে আসার নির্দিষ্ট কাগজ ছাড়া পঞ্চায়েতের কোনো টোটো শহরে ঢুকতে পারবে না। আর হাসপাতালের রাস্তা আমরা পরিস্কার করবই। কোন অবস্থাতেই আর যানজট হবেনা। দিন পনেরোর মধ্যেই বিষয়টা দেখতে পাবেন শহরবাসি।’

হাসপাতালের সুপার তাপস কুমার ঘোষ বলেন, ‘এই রাস্তার বিষয়ে আমরা রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকেও আলোচনা করেছি। পুলিশকেও বিষয়টি জানিয়েছি। মাঝে মধ্যেই জরুরি রোগী আনার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরী হচ্ছে রাস্তায় এই যানজটের জন্য।’ জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘আমরা টোটোর বিষয়ে অনেকটাই এগিয়েছি। টোটোর সমস্যায় হাসপাতালের সামনে যানজট হচ্ছে এটা সত্যিই। আমরা সাত দিনের মধ্যে এই রাস্তার পরিস্থিতি একেবারেই বদলে দেব। কোন টোটোর জট আর এই রাস্তায় থাকবে না।’

পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই পুরসভার ৩৫টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা যাদের টোটো আছে তাদের নাম নথিভুক্তির কাজ প্রায় শেষ। কিছু কাজ বাকি আছে। খুব শীঘ্রই সেই কাজ শেষ করে দুটি শিফটে নীল সাদা এই দুই রংয়ের টোটো শহরের রাস্তায় চলবে। অগুণিত টোটো আর শহরের রাস্তায় দেখা যাবে না। প্রায় সাড়ে তিন হাজার টোটো মালিক কেই এবার পুরসভা থেকে চালানোর অনুমোদন দেওয়া হবে। পঞ্চায়েতের টোটো এবার থেকে জরুরি রোগী নিয়ে অথবা বিশেষ প্রয়োজনে কাগজপত্র সহ পুর এলাকায় ঢুকতে পারবে। নচেৎ পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।