তারকাখচিত তৃণমূল,বিজেপির রবিবারসীয় প্রচারে সরগরম বর্ধমান, বামেদের বিক্ষোভ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ২৭তারিখ পুরসভা নির্বাচনের আগে শেষ রবিবারসীয় প্রচারে সরগরম হয়ে উঠল বর্ধমান। তৃণমূল, বিজেপির একঝাঁক তারকার আগমনে জোরদার প্রচার অভিযান সারলো দুটি রাজনৈতিক দলই। পিছিয়ে ছিল না বামপন্থীরাও। এদিন সকালে বর্ধমানের বীরহাটা ব্রিজ থেকে রানীগঞ্জ বাজার চৌমাথা পর্যন্ত পদযাত্রা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পরে জেলা নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে চায় পে চর্চা কর্মসূচিতে অংশ নেন তিনি। একইসঙ্গে এদিন বিজেপির হয়ে প্রচারে আসেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। এদিন তিনি বর্ধমান পুরসভার ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করেন।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ আনিস খান মৃত্যুর ঘটনায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক কর্মী খুনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। একজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব খুন হয়েছেন। এই ঘটনার অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এখন নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে ব্যস্ত। পশ্চিমবঙ্গে দুষ্কৃতীরা অনায়াসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরাধের ঘটনা বেড়েই চলেছে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।”

অন্যদিকে বিরোধীদের বিভিন্ন জায়গায় প্রচারে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাংসদ সুভাষ সরকার। তিনি বলেন,আগামী দিনে দেশের সমস্ত পুরসভাগুলিতে উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করবে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই বিজেপির মতো সাংগঠনিক দল ক্ষমতায় না থাকলে এই টাকার অপব্যবহার হবে। পরিকাঠামো থাকলেও পরিষেবা পাবেন না মানুষ।

এদিন বর্ধমান পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী নুরুল আলমের সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। এদিন তিনি বাজেপ্রতাপপুর মোড় থেকে দুবরাজ দীঘি মোড় পর্যন্ত রোড শো করেন। তাকে দেখতে রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে যায়। নেত্রীকে ফুল, মালা ছুঁড়ে অভ্যর্থনা জানান উপস্থিত দলীয় সমর্থকরা। নেত্রীও হাত নেড়ে অভ্যর্থনা জানান তাদের। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রায় দু কিলোমিটার রাস্তা ধরে যাওয়া রোড শো। মানুষের উৎসাহ ও ভিড়ে প্রায় এক ঘণ্টার উপর সময় লেগে যায় এই রাস্তা পেরোতে। এই রোড শো’য়ে সায়নী ও প্রার্থী নুরুল আলমের সঙ্গে ছিলেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, বিডিএয়ের চেয়ারপারসন কাকলি তা গুপ্ত সহ অন্যান্যরা। বামপন্থী ছাত্র নেতা আনিস খান হত্যার ঘটনায় সায়নী ঘোষ জানান, “একজন নাগরিক হিসেবে আমার কাছে এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।”

অন্যদিকে এদিন বর্ধমানের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী নাড়ু গোপাল ভকতের প্রচারে আসেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দি রায়। প্রার্থীকে নিয়ে রোড শো করেন তিনি। তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রীকে দেখতে এলাকায় প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। খোলা জিপে এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। সাংসদ শতাব্দি রায় বলেন, মানুষের উচ্ছাস দেখেই বোঝা যাচ্ছে মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে। এই উচ্ছ্বাসের প্রতিফলন ভোট বাক্সে পড়বে। বর্ধমানের সবকটি আসনেই তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করবে মানুষ। এ বিষয়ে কোনোও সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে, প্রাক্তন যুব তৃনমূলের জেলা সভাপতি তথা ১৪নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রাসবিহারী হালদারের সমর্থনে রোড শো করেন রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য। এই রোড শো ঘিরে মানুষের ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। একই সঙ্গে সারা রোড শো জুড়ে দেবাংশু ভট্টাচার্যের গান ‘খেলা হবে’ বাজতে থাকে। দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন,” মানুষের উচ্ছাসই বলে দিচ্ছে আগামী নির্বাচনে মানুষ আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকলে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। তিনি আরোও বলেন,” শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ছেড়ে দিয়েছেন। তাই এখন তার কাজ নেই, তাকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে।” বাম ছাত্র নেতা আনিস খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই এর সঠিক বিচার হোক। রাজ্য পুলিশ যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। তবে বামপন্থীরা এই ঘটনায় রাজনীতিকরণ করতে চাইছে। এর আগেও সুদিপ্ত গুপ্ত নামে এক ছাত্রনেতার মৃত্যুকে ঘিরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল তারা। কিন্তু পরে তার সত্যতা প্রমাণিত হয়নি।

অন্যদিকে, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বামফ্রন্ট প্রার্থীকে এদিন এলাকায় প্রচার করতে দেখা যায়। দলের অন্যান্য জেলা নেতৃত্ব প্রার্থীর সমর্থনে পদযাত্রা করেন। বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই এর পক্ষ থেকে বামপন্থী ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে বর্ধমানের কার্জন গেট এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করা হয়। এসএফআই এর জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায় চৌধুরী বলেন, পরিকল্পিতভাবে বামপন্থী ছাত্র নেতা আনিস খানকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানাচ্ছি আমরা। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অবিলম্বে দোষীদের শাস্তি না হলে রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি।