ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: শনিবার গভীর রাতে দেওয়ানদীঘি থানার পুলিশ তালিত রেল গেটের কাছে দীঘিরপুর এলাকার একটি মাঠ থেকে দুটি জারিক্যানে মোট ২৪টি বোমা উদ্ধার করেছিল। রবিবার বোম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা সেই সব বোম নিষ্ক্রিয় করেছে। আর সেই বোমা উদ্ধারের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই বর্ধমান শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাথানপাড়ায় বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে বোমের আঘাতে জখম হলেন এক ব্যক্তি। তার নাম অসীম বিশ্বাস। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। প্রসঙ্গত কয়েক মাস আগে এই বাথানপাড়ার কাছেই রসিকপুরে বোমা বিস্ফোরণে একটি শিশুর মৃত্যু নিয়ে রাজ্য জুড়ে হৈ চৈ পড়েছিল।
রবিবার বর্ধমান শহরের বাথানপাড়া এলাকায় একটি রেশন দোকানের পিছনে ফাঁকা জায়গায় আগাছা পরিষ্কার করছিলেন অসীম বিশ্বাস। সেই সময় হঠাৎই বাগানের মাটির নিচে থাকা বোমা ফেটে যায়। ঘটনায় আহত হন ওই ব্যাক্তি। তাঁকে বর্ধমান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছান বর্ধমান থানার পুলিশ। জায়গাটিকে ঘিরে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত অসীম বিশ্বাস বাড়ি সংলগ্ন জায়গাটি পরিষ্কার করার কাজ করছিলেন। এক্কেবারে জনবহুল এলাকায় থাকা ফাঁকা জায়গাটির চারিপাশে বসত বাড়ি রয়েছে। এই জায়গায় স্থানীয় শিশুরা খেলাধুলা করে। জায়গাটি আগাছায় ভরে যাওয়ায় এদিন নিজেই পরিষ্কার করছিলেন তিনি। সেই সময়ই বোমা ফেটে গিয়ে আহত হন তিনি। ফাঁকা জায়গাটিতে মাটির নিচে বোমা গুলি পুঁতে রাখা ছিল বলেই অনুমান। ওই জায়গায় আরও বোমা মজুত রয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে তল্লাশি চালাচ্ছে বর্ধমান থানার পুলিশ।
এদিকে বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে নারকীয় গণহত্যা কান্ড এবং তার আগে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু সেখ কে বোমা মেরে খুন করার ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিটি জেলা জুড়ে অস্ত্র, বোমা উদ্ধারে তৎপর হতে হবে। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আর সেই নির্দেশের পরই কার্যত পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশও উঠেপড়ে লাগে প্রতিটি থানা এলাকায় বোমা, গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কাজে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত তিনদিনে জেলা জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ প্রায় ২৫জন দুষ্কৃতিকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র। পাশাপাশি বর্ধমান ও দেওয়ানদীঘি থানা এলাকা থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে প্রায় ২৬টি বোমা। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন থানা এলাকায় প্রতিদিন চলছে রুটমার্চ। পাশপাশি দুষ্কৃতীদের ধরতে চলছে তল্লাশি অভিযান। এই অভিযান চলবে।
যদিও হটাতই পুলিশের এই অতি তৎপরতা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বর্ধমানের বিজেপি নেতা কল্লোল নন্দন জানিয়েছেন, এসবই পুলিশের সাজানো নাটক। ক্রিমিনাল দের সঙ্গে পুলিশের এটা সাময়িক ‘সেটিং’। এতদিন পুলিশ বোমা, বন্দুক, অস্ত্র, অপরাধীদের খুঁজে পাচ্ছিল না। হটাতই অতি সক্রিয় হয়ে গেল। আর জায়গায় জায়গায় বোমা খুঁজে পেতে শুরু হয়ে গেল। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর এখন থানা ভিত্তিক ‘কোটা’ পূরণ করার চাপ এসেছে। এসবই আগে থেকেই দুষ্কৃতীরা মজুদ করে রেখেছিল, এখনও আছে। ঠিকঠাক পদক্ষেপ নিলে এই বাংলা বেআইনি অস্ত্র শূন্য হতে পারে। কিন্তু সরকারের ধারাবাহিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। গোটা বাংলা জুড়ে অপরাধের স্বর্গ রাজ্য তৈরি হয়েছে। পুলিশ এখন যা করছে এটা জাস্ট আই ওয়াশ।