তীব্র গরমের কবল থেকে রক্ষা করতে রমনা বাগান অভয়ারণ্যের পশু পাখিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: চলতি গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে রীতিমত হাঁসফাঁস অবস্থা বর্ধমানবাসীর। গত কয়েকদিনে উষ্ণতার পারদ ৪০ থেকে ৪৩ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। বুধবারও চরম উষ্ণতার সঙ্গে আদ্রতার পরিমান বেশী থাকায় আরও বেশী কষ্ট অনুভব করেছে মানুষ। শুধু মানুষই না, আবহাওয়ার এই তীব্রতায় কাহিল হয়ে পড়ছে পশু পক্ষিরাও। বর্ধমানের একমাত্র চিড়িয়াখানা অর্থাৎ রমনাবাগান অভয়ারণ্যের ভিতরে থাকা প্রাণীদের অবস্থাও তথৈবচ। পশু পক্ষিরা যাতে এই তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে না পড়ে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে বনবিভাগের আধিকারিকরা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুজন চিকিৎসক সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তীক্ষ্ণ নজরে রেখেছেন এই পশু পক্ষীদের। গরমের তাপ থেকে প্রাণীদের আরাম দিতে ইতিমধ্যেই চিতা বাঘ, ভল্লুক, ময়ূর, বাঁদর, মদনটাক, শামুক খোল, শকুনি, টিয়া, ইমু সহ নানান প্রজাতির পাখিদের খাঁচার উপরে খড়ের বিচুলি ভিজিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রমনা বাগান কর্তৃপক্ষ। দিনে বেশ কয়েকবার খাবার জলের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ওআরএস। রমনা বাগানের অন্যতম আকর্ষণ একটি মাত্র ভল্লুকের সুশ্রসায় রীতিমত নজর দিয়েছেন চিকিৎসক থেকে বন কর্মীরা। গরমের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে খাঁচায় লাগানো হয়েছে বিশাল ফ্যান। শরীর কে ঠান্ডা রাখতে মাঝেমধ্যেই দেওয়া হচ্ছে ফ্রুটি। পাশপাশি চলছে ওআরএস। প্রাণী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভল্লুক অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই এই তীব্র গরমের হাত থেকে ভল্লুক কে সুস্থ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যদিও এই তীব্র গরমেও এখনও রমনাবাগানে সেভাবে কোন প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়েনি বলেই জানিয়েছেন মুখ্য বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী। তিনি জানিয়েছেন, যেখানে এই গরমে মানুষই কাহিল হয়ে পড়ছেন সেখানে পশু পাখিরাও যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়তেই পারে। আর তাই যাতে এদের সুস্থ রাখা যায় তারজন্য সবধরনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিশাল এই অরণ্যের প্রচুর গাছপালা রমনা বাগান এলাকাকে কিছুটা হলেও ঠান্ডা রাখে। তবুও প্রাণীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। একটি শাবক সহ তিনটি চিতা বাঘের বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে। কড়া নজরদারি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুমিরদের থাকার জলাশয়ের জলের পরিমান কমে গেলেই পাম্পের সাহায্যে জল দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও জলাশয়ের অল্প জল দ্রুত গরম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই সেই জলকে স্বাভাবিক রাখতেও মাঝে মধ্যে ঠান্ডা জল ছেড়ে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পশুদের সুস্থ রাখতে একাধিক বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ায় কোন প্রাণী এখনও অসুস্থ হয়ে পড়েনি। বনকর্মী থেকে চিকিৎসকেরা সমস্ত দিকে নজর রাখছেন সবসময়।
উল্লেখ্য রমনা বাগান অভয়ারণ্যে এই মুহূর্তে দুটি জলাশয়ে তিনটি কুমির রয়েছে। একটি জায়গায় দুটি মিষ্টি জলের কুমির ও অন্য আর একটি জলাশয়ে দীর্ঘদিনের একটি বিশালাকার কুমির রয়েছে। যেহেতু কুমির রাখার জন্য মাটি কেটে পুকুরের মতন জল ধারণের জায়গা তৈরী করে সেখানে কুমির গুলি রাখা হয়েছিল, প্রচন্ড গরমে সেই জল শুকিয়ে যাচ্ছে। কোনভাবেই জলের অভাবে যাতে কুমিরদের সমস্যায় পড়তে না নয় সেজন্য চালানো হচ্ছে পাম্প। নিময় করে দিনে দুবার পাম্প চালিয়ে জল দেওয়া হচ্ছে।
এক বনকর্মী জানিয়েছেন, আসলে শুধু জল কমে যাচ্ছে বলেই জল দেওয়া হচ্ছে এমনটাও নয়। এই প্রচন্ড গরমে জলও গরম হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে জল দিয়ে জলের স্বাভাবিক অবস্থাটা রক্ষা করা হচ্ছে। একইভাবে নজর রাখা হয়েছে দুটি স্ত্রী ও একটি পুরুষ ময়ুর কেও। নজরে রাখা হয়েছে খরগোশ, ৭৬টি হরিণ, তিনটে ইমু পাখি, দুটি মদন টাক সহ অনান্য পাখি দের উপরেও।