তৃণমূলের নয়া কমিটি নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় শুরু চাপান উতোর, আউশগ্রাম,গুসকরায় তৃণমূলের বিক্ষোভ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বৃহস্পতিবার রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের নবগঠিত কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া এবং না পাওয়া নিয়ে শুরু শুরু হয়ে গেল জোর চর্চা।  জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষক পদ তুলে দিয়ে জেলার কো-অর্ডিনেটরদের মাধ্যমেই সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনা করা হবে বলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে ২১জনের সমন্বয় কমিটিতে রয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কো-অর্ডিনেটর দেবু টুডু।

পূর্ব বর্ধমান জেলায় ফের জেলা সভাপতি হিসাবে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকেই পুননির্বাচিত করা হয়েছে। এদিকে দেবু টুডুকে রাজ্য সমন্বয় কমিটিতে ঠাঁই দেওয়ায় তাঁর গুরুত্ব আরও বাড়ল বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। অন্যদিকে, জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি হিসাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডলকে। জেলা যুব সভাপতি হিসাবে ইতিমধ্যেই তাঁর দক্ষতা এবং কার্য্যক্রম নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই সমালোচনা চলছিল। তাঁকে সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে ছাত্র পরিষদের চলতি সময়ে তরুণ তুর্কি নেতা রাসবিহারী হালদারকে।

রাসবিহারীর মা আল্পনা হালদার বর্ধমান পুরসভার ১৬ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার। যদিও ছাত্রপরিষদের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বর্ধমান শহরে রাসবিহারী হালদারের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও জেলাগতভাবে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের দায়িত্ব পাওয়ায় এখন তিনি কিভাবে যুবকর্মীদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন সকলে। যদিও ভাতারের বিধায়ক সুভাষ মণ্ডলকে ভাতার সহ আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম, মেমারী, মন্তেশ্বর এবং মঙ্গলকোটের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এতদিন আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম এবং মঙ্গলকোট বিধানসভা এলাকার দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল। স্বাভাবিকভাবেই সুভাষ মণ্ডলকে অনুব্রত মণ্ডলের জায়গায় দায়িত্ব দিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের ডানা ছাঁটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর শুক্রবার এই ঘটনায় আউশগ্রাম ১ ও ২ এবং গুসকরায় রীতিমত বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। এদিন তাঁরা সরাসরি জানিয়েছেন, এতদিন তাঁরা অনুব্রত মণ্ডলের অধীনেই কাজ করেছেন দলের। এখনও তাই চান। নতুন যাঁকে বসানো হয়েছে তাঁকে পরিবর্তন করা হোক। আর তাঁকে পরিবর্তন করার জন্য এদিন এই সমাবেশ থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে।
কার্যতই, তৃণমূলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই এদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল দলীয় জলঘোলা। এদিকে, বৃহস্পতিবার তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ মমতাজ সংঘমিতাকে। দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের ওপরে তাঁকে বসানোয় তা নিয়েও শুরু হয়েছে চর্চা। এছাড়াও জামালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের মেণ্টর উজ্জ্বল প্রামাণিককে দলের এসসি,এসটি সেলের রাজ্য সভাপতির পাশাপাশি আরও নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁকে জেলার বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ, কালনা, কাটোয়া, জামালপুর, পূর্বস্থলী উত্তর ও পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভার পর্যবেক্ষক করা হয়েছে।
এছাড়াও গলসীর বিধায়ক অলোক মাঝিকে গলসী, খণ্ডঘোষ এবং রায়না বিধানসভার পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। এরই মাঝে রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে রাজ্য কমিটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভাতারের শান্তনু কোনারকে। তিনি জেলা পরিষদের প্রাক্তন বিদ্যুত কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলা যুব সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। দলের ভুল বোঝাবুঝির জন্য গত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে রীতিমত দলের অভ্যন্তরেই সমালোচনার ঝড় ওঠে।
প্রসঙ্গত, শান্তনু কোনারের প্রতি দলের এই অবিবেচনামূলক কাজের খেসারত হিসাবে গত জুন মাসেই তাকে রাজ্য যুব সভাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায় রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের ১০জনের কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য করেন। আর তারপরেই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তাকে। এর ফলে জেলার তৃণমূল যুব কংগ্রেস আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
এরই পাশাপাশি কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিত কুণ্ডু এবং বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলকেও ৫৮জনের রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একদিকে, যেমন জেলার কয়েকজনকে রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই দিয়ে রীতিমত দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তেমনি ইতিমধ্যেই দলের অনেকে রাজ্য কমিটি এমনকি জেলার কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ না পাওয়ায় হা হুতাশও শুরু হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ায়। চলতি সময়ে বর্ধমান শহরে বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার দাপুটে নেতা খোকন দাসের অনুগামীদের সোস্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট রীতিমত ঝড় তুলেছে।

এবিষয়ে কেউ কেউ লিখছেন, পদটাই বড় কথা নয়, খোকন দাসের নাম হৃদয়ে লেখা হয়ে গেছে। কেউ কেউ বলছেন আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান দক্ষিণের প্রার্থী হিসাবে তাঁরা খোকন দাসকেই দেখতে চান। কেউ কেউ লিখছেন, তাঁর যা যোগ্যতা এবং তিনি শহরে থেকেই আশপাশের জেলাতেও যে সুনাম কুড়িয়েছেন তাতে তাঁকে পূর্ব বর্ধমানের জেলা সভাপতি করা উচিত ছিল। যদিও এই চর্চা নিয়ে কোনো মন্তব্যই মেলেনি তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে।
দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর তথা রাজ্য সমন্বয় কমিটির সদস্য দেবু টুডু জানিয়েছেন, দল যা ভাল বুঝেছেন তাই করেছেন। দল যা দায়িত্ব দিয়েছেন প্রত্যেকেরই উচিত তা যথাযথভাবে পালন করা। দলের প্রতি অনুগত হওয়াটাই আগে দরকার। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার এই কমিটি ঘোষণার পরই রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে জেলা নেতৃত্বের ভিডিও কনফারেন্সে আগামী দিনে কি করতে হবে তা নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনাও হয়েছে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, মূল শত্রু বিজেপিকে ঠেকাতে রীতিমত উঠেপড়ে লাগার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Recent Posts