তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতার বাড়িতে বোমাবাজি, অভিযোগের তির তৃণমূলেরই ওপর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে পূর্ব বর্ধমান জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ ততই তীব্র আকার নিতে শুরু করছে। সম্প্রতি গলসী সহ বর্ধমান শহরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এবার খোদ বর্ধমান ১নং ব্লকের ভোতার পাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসান এবং রায়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আলমগীর হাসানের বাড়ি লক্ষ্য করে গভীর রাতে বোমাবাজি করার ঘটনায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। খোদ নুরুল হাসান এই ঘটনায় তৃণমূলের বর্ধমান ১নং ব্লকের সভানেত্রী কাকলী গুপ্ত, ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি এবং ১নং পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানস ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি সেখ জামালের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় সরাসরি অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

নুরুল হাসান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত্রি প্রায় দেড়টা নাগাদ তাঁদের ভোতার পাড় এলাকার বাড়িতে বোমা মারা হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে ছাড়াও ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা। উল্লেখ্য, নুরুল হাসান এবং আলমগীর হাসান একই বাড়িতে থাকেন। নুরুল হাসান জানিয়েছেন, যে বোমাটি ছোঁড়া হয় সেটি নাকি একটি সকেট বোমা ছিল। বারান্দার যে অংশে বোমা মারা হয় তার ভিতরেই ছিল গ্যাস সিলিন্ডার। নুরুল হাসান জানিয়েছেন, অনেক বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারতো এদিন। এদিকে, এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা গেছে একটি বাইকে দুজন তাদের বাড়ির দিকে আসছে। শুত্রুবার সকালে বর্ধমান থানার আই সি পিন্টু সাহা ঘটনাস্থলে হাজির হন। নুরুল হাসানের বাড়ি থেকে ফেটে যাওয়া বোমার অংশ উদ্ধার করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

নুরুল হাসান জানিয়েছেন, তাঁকে মেরে ফেলার জন্য বেশ কিছুদিন ধরেই চক্রান্ত করছেন ব্লকের ওই সব নেতা-নেত্রীরা। তার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেবেলাতেই কাকলী গুপ্ত এবং মানস ভট্টাচার্য্যের নির্দেশে সেখ জামাল ডাঙাপাড়ায় দুষ্কৃতিদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের খবর তার কাছে এসে পৌঁছায়। এই বৈঠকেই তাঁকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই তিনি প্রাণনাশের আশংকায় বর্ধমান থানায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। আর সেই অভিযোগ জানানোর পরই সেদিন রাতেই তাঁর বাড়িতে বোমাবাজি করা হয়।

যদিও এব্যাপারে সেখ জামাল জানিয়েছেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাঁর সঙ্গে নুরুল হাসানের কোনো বিরোধ নেই। তাঁরা একইদল করেন। সেক্ষেত্রে মতবিরোধ থাকতেই পারে। তিনি জানিয়েছেন, এই বোমাবাজির ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। অপরদিকে, কাকলী গুপ্তা জানিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকে তিনি ১নং ব্লকের দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু দফায় দফায় তাঁর বিরুদ্ধে নুরুল হাসান মিথ্যা অভিযোগ করেই গেছেন। বোমাবাজির ঘটনাতেও তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে তিনি বা তাঁর দলের কেউ জড়িত নন। সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এও জানিয়েছেন, এই ঘটনা নুরুল হাসানেরই সাজানো গোছানো কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।

অপরদিকে, বিজেপির জেলা সম্পাদক সুনীল গুপ্তা  এঘটনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, তৃণমূলের অধঃপতন শুরু হয়ে গেছে। এলাকার মানুষ এই সব নেতাদের পছন্দই করেন না। গাছ কাটা, রাস্তা তৈরী, জমি বিক্রি, পুকুর ভরাট প্রভৃতির টাকা ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করেই লড়াই করছে। সাধারণ মানুষ সব দেখছেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে মানুষ এই সব নেতাদের ছুঁড়ে ফেলে দেবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চের এক সভায় জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু বিজেপির বিরুদ্ধে বোমা, পিস্তল নিয়ে ঘোরাফেরার অভিযোগ তুলেছিলেন। বস্তুত, নুরুল হাসানের বাড়িতে বোমাবাজি এবং তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করায় এবার ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। যদিও দেবু টুডু জানিয়েছেন, এই ঘটনায় পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Recent Posts