থমথমে সন্তোষপুর প্রায় পুরুষ শূন্য, সাহস যোগাচ্ছে পুলিশ

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: একটা খুনের ঘটনা বিপর্যস্ত করে দিয়েছে গলসি থানার লোয়া রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের সন্তোষপুর গ্রাম কে। প্রায় একপ্রকার পুরুষ শূন্য এই গ্রাম। খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে মূল অভিযুক্ত মনোজ ঘোষ। খুনের ঘটনার পর গ্রামবাসী ও বহিরাগতদের তাণ্ডবে একেরপর এক বাড়ি, গাড়ি, খড়ের পালুই এ আগুন লাগানো, ভাঙচুর, প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টার অভিযোগে ইতিমধ্যেই ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গলসি থানার পুলিশ। এখনো ঘটনায় যুক্ত কয়েকজনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই গোটা গ্রাম জুড়ে রয়েছে আতংকের পরিবেশ। 

যদিও বৃহস্পতিবার গলসি থানার পুলিশ মৃত উৎপল ঘোষের পরিবারের সঙ্গে এবং গ্রামের কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। পুলিশ গ্রামবাসীদের সাহস দিয়ে জানিয়েছে, ভয় বা আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। গ্রামে অশান্তি সৃষ্টি করার অপরাধে কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গ্রামে যারা আছেন সবাই তো দোষী নয়। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে সকলকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার আবেদন জানানো হয়েছে।
গ্রামের এই পরিস্থিতিতে সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছে মৃত উৎপল ঘোষের পরিবারের লোকেরা। উৎপল ঘোষের মৃত্যু পরবর্তী কাজের জন্য গ্রামের নাপিত থেকে পুরোহিত পাচ্ছেন না তারা। ফলে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের পরিবার কে। উৎপল ঘোষের  স্ত্রী সাধনা ঘোষ জানিয়েছেন,‘পুলিশ যাদের ধরেছে তারা আমার স্বামীকে খুন করেনি। যারা খুনের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা এখনও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি পুলিশকে চন্দন ঘোষের নামে অভিযোগ করেছি। এখনও সে বুক ফুলিয়ে গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ আমাদের এই অসহায় পরিস্থিতিতে কেউ আসছে না। সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নাপিত, পুরোহিত কেউ আসছেন না। কিভাবে কাজ করব আমার স্বামীর। আমি হাতজোড় করে পুলিশের কাছে অনুরোধ করছি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে যারা অপরাধ করেনি তাদের ছেড়ে দিন। করোনার সময় এক দিনে হারিয়েছিলাম বাবা ও দাদু কে। এবার স্বামী। তখনও কাউকে পাইনি পরিস্থিতির জন্য। আর আজও গ্রামের লোক আমাদের বাড়ি আসতে সাহস পাচ্ছেনা পুলিশের ভয়ে।’
উৎপল ঘোষ খুনে মুল অভিযুক্ত মনোজ ঘোষ কে পুলিশ ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও চালাচ্ছে পুলিশ। সে প্রসঙ্গে সাধনা ঘোষ বলেন, ‘মনোজের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই আজ আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমার ছয় বছরের ছেলে। বয়স্ক শ্বশুর শ্বাশুড়ি। এদের কে দেখবে? মনোজ ঘোষ, হারাধন ঘোষদের মতন আমাদের এত টাকা নেই বলে আমরা বিচার পাবো না?’ উৎপলের কাকা রামচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘উৎপল খুন হবার দিন রাতে পুকুরের ধার থেকে মোবাইলে কথা বলতে বলতে আসছিল। বাড়ির কাছেই পুকুর পাড়ে তাল গাছের আড়ালে কুড়ুল হাতে লুকিয়ে ছিল মনোজ। কাছে আসতেই উৎপলের কানের পাশে গলার কাছে কুড়ুল দিয়ে কোপা মারলে মাটিতে পড়ে যায় উৎপল। তারপরই তার মাথায় কুড়ুল বসিয়ে পালিয়ে যায় মনোজ।
পুলিশ দেখুক আরও কারা জড়িত। কেন খুন করা হল।’ এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে পুলিশ গ্রামে থাকা কয়েকজন মহিলা ও কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে কথা বলছে।  খাঁ খাঁ করছে গ্রাম। রাস্তায় মানুষ নেই বললেই চলে। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন বলেন, ‘পুলিশ ঘটনার পরেই মুল অভিযুক্ত কে গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলেছে। খুনের তথ্য প্রমান সংগ্রহ করছে যাতে দোষী ব্যক্তি সাজা পায়। সমস্তটাই এখনও তদন্ত পর্যায়ে। আর ভয়ে কেউ গ্রামের বাইরে থাকুক সেটা পুলিশও চায়না।’