ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে গোটা রাজ্যের সমস্ত জেলার জেলা কমিটিকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলা কমিটি ঘোষণা করা হল। এদিন বর্ধমান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ জেলা কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন। উপস্থিত ছিলেন দুই পর্যবেক্ষক অলোক মাঝি এবং উজ্জ্বল প্রামাণিক সহ জেলা যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার। এদিন জেলা যুব কমিটিও ঘোষণা করেন রাসবিহারী।
আসন্ন বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্যভাবে নতুন জেলা কমিটিতে যেমন নিয়ে আসা হয়েছে অনেক পুরনো নেতৃত্বকে, পাশাপাশি নিয়ে আসা হয়েছে কিছু নতুন মুখকেও। আবার তালিকায় ঠাঁই পায়নি অনেক তৃণমূল নেতাই। পাশাপাশি এমন অনেক নেতার নাম জেলা কমিটি থেকে ব্লক কমিটিতে রয়েছে যাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারী মামলাও রয়েছে। আর এই নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তাঁর স্বামী রথীন মল্লিকের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনা এখন আদালতে বিচারাধীন। অথচ সেই রথীন মল্লিককেই জেলা কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে। যা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
এব্যাপারে খোদ স্বপন দেবনাথকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সরাসরি বলেন, ‘দল ভাল বুঝেছে তাই করেছে’। বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের এই জেলা কমিটিতে চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ মমতাজ সংঘমিতাকে। সভাপতি করা হয়েছে স্বপন দেবনাথকে। এছাড়াও কো অর্ডিনেটর হিসাবে রয়েছেন উজ্জ্বল প্রামাণিক, সুভাষ মণ্ডল এবং অলোক মাঝি। জেলা কমিটিতে ২৭জনকে ভাইস প্রেসিডেণ্ট করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ২৬জনকে। সম্পাদক করা হয়েছে ১৬ জনকে।
মোট ৭৪ জনের জেলা কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে বেশ কিছু নতুন মুখকেও। অপরদিকে, এদিন ব্লকের সভাপতি সংক্রান্ত একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে নতুন করে সভাপতি হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছে এক সময়ের দাপুটে নেতা বামদেব মণ্ডলকে। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রায়না-১ব্লকের। একদা লালদূর্গ রায়নাকে সিপিএমের হাত থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে এই বামদেব মণ্ডল বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। যদিও তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর তাঁকেই গাঁজা কেস সহ একাধিক কেসে জেল খাটানো হয়। অভিমানে বামদেব মণ্ডল কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
সামনেই বিধানসভা ভোট। আসন্ন নির্বাচনে রায়নার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামাল দিতে তাই ফের বামদেব মণ্ডলকেই দায়িত্ব দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, বর্ধমান ২নং ব্লকের সভাপতি নিয়েও বিধায়ক নিশীথ মালিকের সঙ্গে শ্যামল দত্তের বিরোধ নিয়ে ব্যাপক চর্চা চলছিল। শেষ পর্যন্ত বর্ধমান ২নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল দত্তকেই বর্ধমান ২-এর সভাপতি করা হয়েছে। সহ সভাপতি করা হয়েছে অম্বিকা যশকে। বর্ধমান ১-এর সভাপতি হিসাবে কাকলী তা-কেই রাখা হয়েছে। সহসভাপতি করা হয়েছে সঞ্জয় কোনারকে। বর্ধমান শহরের সভাপতি হিসাবে অরুপ দাসকেই বহাল রাখা হয়েছে। জামালপুরে ব্লক সভাপতি করা হয়েছে শ্রীমন্ত রায়কে। ভাতারের ব্লক সভাপতি করা হয়েছে দেবাশীষ ব্যানার্জ্জীকে।
অন্যদিকে, মেমারী ২ এর ব্লক সভাপতি রাখা হয়েছে মহম্মদ ইসমাইলকে। সহ সভাপতি করা হয়েছে অমর সাহাকে। মন্তেশ্বরের সভাপতি করা হয়েছে আজিজুল হককে এবং সহ সভাপতি করা হয়েছে লালন সেখকে। গলসী ১ এর সভাপতি করা হয়েছে জনার্দন চ্যাটাজ্জীকে এবং গলসী ২ এর সভাপতি করা হয়েছে সুজন মণ্ডলকে সহ সভাপতি করা হয়েছে শৈলেন হালদার (বিল্টু)কে। খণ্ডঘোষে অপার্থিব ইসলামকে সভাপতি করা হয়েছে। রায়না ২এর সভাপতি করা হয়েছে অসীম পালকে এবং সহ সভাপতি করা হয়েছে সৈয়দ কালিমুদ্দিনকে।