নার্সিং ট্রেনিং-এর নামে গোটা রাজ্য জুড়ে ভয়াবহ প্রতারণা, আদালতের পথে প্রতারিতরা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাজ্য জুড়ে ভুঁইফোড় নার্সিং ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান খুলে যুবক যুবতীদের প্রতারণার ঘটনা বেড়ে চলেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বর্ধমানের কয়েকজন প্রতারিত ও তাঁদের সঙ্গীরা। সোমবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে এইরকমই প্রতারিত এক যুবকের দাদা কৌশিক মুখোপাধ‌্যায় জানিয়েছেনগত কয়েক বছরে গোটা রাজ্য জুড়েই একাধিক এই ধরণের প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে। সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে যুবক যুবতীদের নার্সিং ট্রেনিংএর জন্য আহ্বান করছে। আড়াই থেকে  লাখ টাকার কোর্স ফি দিয়ে যুবক যুবতীরা সেখানে ভর্তি হচ্ছেন। ভর্তির পর তাঁদের জানানো হচ্ছে ব্যাঙ্গালোর থেকে পরীক্ষা নেওয়া হবে।


 তাঁরা অভিযোগ করেছেন, রীতিমত কয়েকটি নার্সিং হোমের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিকভাবে তাঁদের প্রশিক্ষণের নামে যা শেখানো হচ্ছে তা হাতুড়ে বিদ্যারও ধারেকাছে নয়। ফলে নির্দিষ্ট সময় পরে যখন তাঁরা নার্সিংএর সার্টিফিকেট হাতে পাচ্ছেন তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার সরকারি কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকছে না। যেহেতু এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির কোনো ইণ্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের অনুমোদন প্রাপ্ত নয়, তাই সরকারী চাকুরিও তাঁরা পাচ্ছেন না। এমনকি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর এই রাজ্যে ওয়েষ্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলের রেজিষ্টেশন না থাকায় তাঁরা সরকারী চাকরি পাবেন না। ফলে অত্যন্ত কম টাকার বিনিময়ে তাঁরা বেসরকারী কোনো সংস্থায় যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

 


কিন্তু একজন রোগীর সেবা করার জন্য নার্সের যে ধরণের প্রশিক্ষণ থাকার কথা তা না থাকায় তাঁদের হাতে রোগীর জীবন সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, গত কয়েকবছরে গোটা রাজ্য জুড়ে এভাবে ভুঁইফোড় সংস্থা গজিয়ে ওঠায় রীতিমত গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চরম আঘাত এসে পড়ছে। তিনি জানিয়েছেন, গতবছর গোটা রাজ্য থেকে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি যুবক যুবতী এই প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এবারে লকডাউন এবং করোনার জেরে কার্যত বাড়িতে বসেই নার্সিং কোর্স করার জন্য এই আবেদন কয়েকগুণ বাড়ার সম্ভাবনা।


তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁরা গোটা রাজ্যে ৫৬টি এই রকম সংস্থার তাঁরা হদিশ পেয়েছেন। কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, এই সংখ্যা আরও বেশি। ইতিমধ্যেই কলকাতার বিধাননগর এবং দুর্গাপুরের সিটি সেণ্টারে দুটি সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআরও করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে ওয়েষ্ট বেঙ্গল নার্সিং কাউন্সিলের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি দিল্লীতে সংসদেও যাতে বিষয়টি তোলা যায় সে ব্যাপারে তাঁরা তদ্বির করতে শুরু করেছেন।

 

কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, আরটিআইএর উত্তর আসার পর তাঁরা জনস্বার্থে মামলাও দায়ের করতে চলেছেন। এদিন কৌশিক চৌধুরী নামে এক যুবক অভিযোগ করেছেন, তিনি তাঁর স্ত্রী কোয়েল মজুমদারকে দুর্গাপুরের এনএসএস গ্রুপ অফ ইনষ্টিটিউশনে ভর্তি করিয়েছিলেন। ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের অব্যবস্থা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং সর্বোপরি কোয়েল মজুমদারের (সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেই এটি করা হচ্ছে) সমস্ত অরিজিন্যাল সার্টিফিকেট জমা নেওয়া হয়। ভর্তির পর তিনি বুঝতে পারেন কার্যত তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি ওই টাকা ফেরত পাননি। কৌশিকবাবুরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে রাজ্য সরকার এব্যাপারে দৃষ্টি না দিলে হাজার হাজার যুবক যুবতীর কেরিয়ার সহ চরম অর্থনৈতিক প্রতারণার শিকার হয়ে পড়বেন।

Recent Posts