ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: একেই বলে খোদ বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নদী থেকে বালি চুরির খবরের পরিপ্রেক্ষিতে গলসীর গোহগ্রামে দামোদরে ভূমি দপ্তরের আধিকারিকরা অভিযান চালালেন খোদ অবৈধ বালি কারবারী কে সঙ্গে নিয়েই। আর এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে স্থানীয় এলাকা সহ প্রশাসনিক মহলে। জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক ভূমি ও ভূমি সংস্কার ঋদ্ধি ব্যানার্জি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এটা যদি ঘটে থাকে, তাহলে তা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। তবে এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে তিনি কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, বুধবার গোহগ্রামে ভূমি দপ্তরের অভিযানে অতিরিক্ত বালি মজুদের প্রমান পাওয়া গেছে। সেই বালির পরিমান নির্ধারণ করে জরিমানা সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রশ্ন উঠেছে যে সমস্ত অসাধু ব্যক্তি সরকারের সম্পত্তি চুরি করে রাজস্ব ক্ষতি করছে, তাদেরই বিরুদ্ধে অভিযানে যাওয়ার সময় কিভাবে খোদ অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন আধিকারিকরা। যদিও গলসী ২ব্লক ভূমি দপ্তরের আধিকারিক রফিকুল ইসলাম ও অর্ণব ব্যানার্জি কে অভিযান প্রসঙ্গে এবং অবৈধ বালি কারবারী কেন তাদের সঙ্গে ছিলেন – এই প্রসঙ্গে বারবার জানতে চাওয়া হলেও তাঁরা কার্যত মুখে কুলুপ আঁটেন। উল্লেখ্য সরকারী নির্দেশ অমান্য করে এলাকায় রমরমিয়ে বালি ঘাট চলছে সেই খবর সংবাদ মাধ্যমে জানতে পেরেই অভিযানে আসেন তারা। দেখা যায় এক অবৈধ ঘাট মালিকের কালো স্করপিও গাড়িকে সামনে নিয়ে অভিযানে আসেন সরকারি আধিকারিকরা।
তাহলে কি অবৈধ ঘাট মালিকদের আগাম অভিযানের খবর জানিয়ে দিয়েই অভিযান করতে আসছে ভূমি দপ্তর! সেটাই এখন সবচাইতে বড় প্রশ্ন। এদিকে শেখ দোলন নামের ওই ব্যক্তি নিজেকে একটি বৈধ ঘাটের ম্যানেজার বলে দাবী করেছেন। পাশাপাশি আরও দাবী করছেন তাদের সেই ঘাট এখন বন্ধ আছে। তিনি অন্যঘাট থেকে বালি কিনে স্টক বা মজুত করছেন। তার নাকি সরকারী অনুমতিও আছে। তিনি বলেন গোহগ্রামে তিনটি ঘাটে নেট চলছে। কিন্তু তার ঘাটে নেট চলেনি। তিনি সেখান থেকে বালি কিনে মজুত করছেন। এক্ষেত্রে অবৈধভাবে এই এলাকায় উত্তম এবং সঞ্জয় নামে দুজন বালি কারবার চালাচ্ছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে গলসির গোহগ্রাম এলাকায় দামোদর থেকে যে বালি পাচার হচ্ছে সেইসবই কি এখানের মজুত করা বালি! যা ভূমি দপ্তরের নজরে আসছে না। এদিকে নির্দেশ অমান্য করে বালি তোলার বিরুদ্ধে অভিযানে এসে সরকারী অফিসাররাই রীতিমত অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে সাথে নিয়েই ঘুরছেন। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি ব্লক ভূমি দপ্তর এই অবৈধ কাজে গোপনে মদত দিচ্ছে? নাকি তারা ওই কাজকে বৈধ বলে মনে করছেন? ঘাটের পাশে বসাবাসকারী এক ব্যক্তি জানান, বুধবার সকালেও এখানে ঘাট চলেছে। সরকারী গাড়ি আসার একটু আগে বন্ধ হয়েছে।
আরও এক ব্যক্তি বলেন, ঘাটগুলির পারমিট এক জায়গায়, আর নদীতে পঞ্চাশ ষাট ফুট নিচে পাইপ ঢুকিয়ে বালি কাটছে আর এক জায়গায়। এর জন্য নদীর বুকে বড় বড় দ তৈরী হচ্ছে যাতে নদীর ভাঁঙন বেড়ে যাচ্ছে। এর জন্যই কয়েক বছর আগে দ এর জলে ডুবে মারা যায় স্থানীয় দুজন কিশোর। এদিন এলাকায় এসে দেখা গেছে, নদীর বুকে বহু জায়গায় এখনও পর্যন্ত বড় বড় আট দশটি বালি তোলার মেশিন মজুত রয়েছে। রয়েছে বালি ছাঁকাই করার মেশিনও। পাশাপাশি বেশকিছু বালি বহনকারী ডাম্পার দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকটি জায়গায়। প্রশ্ন উঠেছে এলাকার ঘাট যদি বন্ধ আছে তাহলে কেন এইসব মেশিন ও গাড়ি নদীর বক্ষে রাখা আছে। চোখের সামনে সবকিছু দেখেও কেন ভূমি দপ্তর না দেখার ভান করছেন।
স্থানীয় মানুষ জানিয়েছেন, গাড়ির টায়ারের দাগ ও বালি তোলার মেশিনের যাতায়াতের পথই বলে দিচ্ছে অভিযানে আসার কিছুক্ষণ আগেই মেশিনগুলোকে তড়িঘড়ি ঘাটের কিছুটা পাশে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সেই সব মেশিন, ডাম্পর ও নেট মেশিন নদীর বক্ষে মজুত আছে। এলাকাবাসীরাও বলছেন ঘাট চলছে। ঘাট মালিকও বলছেন ঘাট চলছে। সেখানে নীরব কেন ব্লক ভূমি দপ্তর? অভিযানে আসা সরকারী আধিকারিক রফিকুল ইসলাম ও অর্নব ব্যানার্জি কে বারবার প্রশ্ন করা হলে তারা কোনো উত্তর ই দিতে পারেননি। কি দেখলেন বারবার জানতে চাওয়া হলে তাঁরা গাড়ি পাশ কাটিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যান এলাকা থেকে।