ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: গতবছর থেকেই শুরু হয়েছিল এই নিয়ম ভাঙার লড়াই। পরিণীতা। কেন সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো দুর্গাপুজোয় আনন্দ করতে পারবে না? কেন তারা দেবীকে বরণ করতে পারবে না? কেন বৈধব্যের জন্য দুর্গাকে সিঁদুর দিয়ে বরণ করতে পারবেন না মহিলারা? এইরকম বেশ কিছু প্রশ্নকে সামনে নিয়েই বর্ধমানের ফুডিশ ক্লাব গতবছর থেকেই শুরু করেছিল সমাজের সকলকে এক করে দেওয়ার লড়াই। এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটল না।
সোমবার বিজয়া দশমীর দিন বর্ধমান শহরের বাদমতলা এলাকায় ক্লাবের এক সদস্যের বাড়ির ছাদে আয়োজিত হল খোলা আকাশের নীচে চাঁদ, তারাকে সাক্ষী রেখে পরিণীতার দ্বিতীয় বছরের অচলায়তন ভাঙার খেলা। অংশ নিলেন বর্ধমান শহরের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যারা, বিধবা মহিলারাও। রীতিমত দেবী দুর্গাকে বরণ করলেন তাঁরা সিঁদুর দিয়ে। খেললেন সিঁদুর। নাচলেন ধুনুচি নাচ।
ফুডিশ ক্লাবের পক্ষে মৈনাক মুখার্জি, নীলাক্ষী সিনহা জানিয়েছেন, বিগত বেশ কয়েকবছর ধরেই তাঁদের সদস্যরা সমাজের এই অচলায়তন, এই কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। গতবছরই শহরের কাঁটাপুকুর সার্বজনীন দুর্গাপুজো মণ্ডপে প্রথম তাঁরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যা গোটা ভারতবর্ষে নজীর। তাঁরাই প্রথম এই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। নীলাক্ষীদেবী জানিয়েছেন, মা দুর্গা – সকলের। ঈশ্বরের কাছে কোনো ভেদাভেদ নেই। অন্তরের ভক্তিই যেখানে শ্রেষ্ঠ, সেখানে কেন এই বৈষম্য থাকবে ?
তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা এই আন্দোলনের নাম রেখেছেন পরিণীতা। দ্বিতীয় বছরে এসে তাঁরা ফের প্রমাণ দিলেন তাঁরাই পরিণীতা। শুধু এখানেই থেমে থাকা নয়, ফুডিশ ক্লাব আগামী দিনে আরও একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বামী, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মহিলাদেরও তাঁরা সামিল করছেন। নয়া এই আন্দোলনের নাম রেখেছেন সাহসিনী। তাঁদের লক্ষ্য, কেউ কারও বোঝা হয়ে থাকবে না। বাড়ি ফিরতে না পারলে তাঁরাই তৈরী করবে নিজেদের বাড়ি – পাশে থাকবে ফুডিশ ক্লাব। এবছর পুজো থেকেই শুরু হল এই নয়া প্রোজেক্ট সাহসিনী। এখন শুধু সামনের দিকে তাকানোর পালা, সকলকে সাথে ও পাশে নিয়ে।