পাপী পেট কা সওয়াল, করোনার জেরে বদলে যাচ্ছে রোজগারের পথ

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: চলতি করোনার পরিস্থিতির জেরে কার্যত সকল সাধারণ মানুষকে ঘরে স্বেচ্ছাবন্দি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারীভাবে। কিন্তু তারপরেও প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে মানুষ লকডাউন ভেঙে বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়। সতর্কতার নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে রাস্তায় দেদার যাতায়াত, চলছে সামাজিক দূরত্বকে দূরে ঠেলে সেই পুরনো নিয়মেই কাছাকাছি ঘেঁষে দাঁড়ানোর অভ্যাস। গত দুদিনে পুলিশী ধরপাকড়ের ঝাঁঝ কিছুটা কমে যেতেই বাজার গঞ্জে সেই চেনা ভিড়। কোথায় লকডাউন?
কিন্তু এরই মাঝে বহু মানুষ যাঁরা বিশ্বব‌্যাপী এই মহামারী নিয়ে বাস্তবিকই চিন্তিত তাঁরা বাড়ি থেকে বার হচ্ছেন না। নিজেদের গৃহবিন্দি করে রেখেছেন। আর সেই সুযোগেই চলতি সময়ে কিছু মানুষ নতুন করে রোজগারের পথ খুঁজে পেয়েছেন। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে এখন পাড়ায় পাড়ায় দেখা মিলছে ঠেলাওয়ালা তথা ভ্যানওয়ালাদের। ভ্যানে নানারকমের সব্জি,ফল নিয়ে তাঁরা পাড়ায় পাড়ায় বাড়ির দরজার সামনেই পৌঁছে যাচ্ছে। আর করোনার জেরে যাঁরা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না, তাঁরা হাতের মুঠোর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি পেয়ে যাওয়ায় বেজায় খুশী। 
এমনকি বাজারের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি পড়লেও তাতে কিন্তু আমল দিচ্ছেন না গৃহস্থরা। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে যে ঘরে বসেই তাঁরা সবজি পাচ্ছেন এটাই তাঁদের কাছে যথেষ্ট বলেই মনে করছেন গৃহ কর্তা থেকে গৃহিণীরা। বৃহস্পতিবার বর্ধমানের বাজারে যেখন আলু বিক্রি হয়েছে ১৬ থেকে ১৭ টাকা কেজি, ভ্যানওয়ালাদের কাছে তা ১৮ টাকা কেজি। পটল বাজারে মিলেছে ৩৬ টাকা প্রতি কেজি, ভ্যানওয়ালাদের কাছে ৪০-৪৮ টাকা প্রতি কেজি। সজনের ডাঁটা বাজারে ১৩০-১৪০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়েছে, ভ্যানওয়ালাদের কাছে ১৫০-১৬০ টাকা প্রতি কেজি। টমেটো বাজারে ৩০-৩৫ টাকা কেজি, ভ্যানওয়ালাদের কাছে ৩২-৩৬ এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে। কাঁচা কুমড়ে বাজারে ১২-১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, ভ্যানওয়ালাদের কাছে বিক্রি ১৫-২০ টাকা প্রতি কেজিতে। কার্যত প্রায় প্রতিটি আনাজেই কমবেশি বাজার তুলনায় কিছু বেশি দাম নেওয়া হয়েছে। 
ভ্যানওয়ালা সবজি বিক্রেতাদের যুক্তি, তাঁরা বাজার থেকে মাল কিনে বাড়ি বাড়ি যে পৌঁছাচ্ছেন এই পরিশ্রমের মূল্য হিসাবেই তাঁদের কিছুটা দাম বেশি নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে, যাঁরা এই সময়ে বাড়ি বাড়ি সবজি নিয়ে হাজির হচ্ছেন তাঁরাও দিনান্তে ভাল টাকা রোজগার করছেন। কারণ অবিক্রিত বলে প্রায় কিছুই থাকছে না। আর ভ্যানওয়ালা সবজি বিক্রেতাদের জেরে এবার সংকটে পড়ছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। 
কারণ বাড়ির দরজায় মালপত্র পেয়ে যাওয়ায় সরকারী নির্দেশে বাজার খোলা থাকলেও সেখানে যেতে রাজী হচ্ছেন না অনেকেই। ফলে বাজারে বসে থাকা ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সমস্যায়। জানা গেছে, এই সমস্ত নতুন সব্জি বিক্রেতা ভ্যানওয়ালাদের একটি বৃহদাংশই আদপে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত। এঁদের মধ্যে কেউ টোটো চালান,কেউ অন্যের দোকানে কাজ করেন, কেউ রংমিস্ত্রি, কেউ আবার দিনমজুরের কাজ করেন। চলতি করোনার জেরে তাঁদের সেই পেশাগত কাজ বন্ধ। আর তাই যেহেতু বাড়িতে বসে থাকলে সংসার চলবে না, তাই বিকল্প আয়ের রাস্তা খুঁজে নিয়েছেন তাঁরা। 
তাঁরা জানিয়েছেন, এভাবে সব্জি বিক্রির মধ্যে দিয়ে একদিকে যেমন তাঁদের রোজগার হচ্ছে সংসার চালানোর জন্য, তেমনি কাঁচা বাজার যা তাদের কিনেই সংসার চালাতে হত – তারও কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে এদের মধ্যে অনেকেই যেমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিজের নিজের পেশায় ফিরে যাবার কথা বলেছেন, কেউ কেউ আবার যাঁদের নিজস্ব ভ্যান রয়েছে তাঁরা সব্জি বিক্রিকেই এবার পেশা হিসাবে নেবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আরো পড়ুন