পিএইচডির প্রথম ফেলোশিপের টাকা পথ পশুদের জন্য দান করলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেওয়া প্রথম ফেলোশিপের টাকা পথপশুদের ভরণ পোষণের জন্য দান করে দিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পিএইচডি গবেষণারত ছাত্র। হুগলির আরামবাগের বাসিন্দা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শামীম আখতার মোল্লা কমার্স নিয়ে পিএইচডি করছেন। গত মাসের শেষে ইউজিসি থেকে তার কাছে প্রথম ফেলোশিপের ৩১হাজার টাকা এসে পৌঁছায়। আর এরপরই শামীম সিদ্ধান্ত নেন গবেষণার জন্য পাওয়া প্রথম টাকা তিনি পথ পশুদের সুচিকিৎসা, খাওয়া দাওয়া, দেখভাল যারা করে সেই সমস্ত সংস্থার মধ্যে বিতরণ করে দেবেন। 

সেইমত রবিবার বর্ধমান শহরের পশু প্রেমী সংস্থা ভয়েস ফর দি ভয়েসলেস কর্তৃপক্ষের হাতে ১০হাজার টাকা তুলে দিলেন রিসার্চ স্কলার শামীম আখতার মোল্লা। সংস্থার কর্ণধার অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, ‘ এ এক অভিনব মানবিক উদ্যোগ। শামীম আখতার মোল্লার এই মানসিকতা সমাজে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাবে পরিবেশে অবহেলিত পশুদের প্রতি আরো মানবিক হওয়ার। ওনার এই উদ্যোগ কে কুর্নিশ জানাই।’

গবেষক শামীম জানিয়েছেন, ছোট থেকেই গৃহপালিত ও পথ পশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছিলই। ওদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক কারণে তা সবসময় করে উঠতে পারতেন না। সেই নিয়ে আক্ষেপ ছিল। কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ২০১৬সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চলে আসেন শহরে। ২০১৮সালে মাস্টার ডিগ্রি শেষ করেন। ২০২০তে বি.এড পাশ করেন। এরপর জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ এর পরীক্ষা দিয়ে ২০২১সালে পিএইচডি করার জন্য ভর্তি হন। ২০২২এর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁর কাছে এসে পৌঁছায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দেওয়া প্রথম ফেলোশিপের ৩১ হাজার টাকা। আর এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই টাকা তিনি পথ পশুদের জন্য ব্যয় করবেন।

শামীম জানিয়েছেন, তিনি শহরের আরো কিছু পশু প্রেমী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করছেন। যাতে আরও বেশি পশুদের সুস্থ রক্ষণাবেক্ষণে তিনি অর্থ সাহায্য করতে পারেন। তিনি জানিয়েছেন, যতদিন না তাঁর পিএইচডি শেষ হচ্ছে ততদিন প্রতি মাসে ৩১হাজার টাকা করে এই ফেলোশিপের টাকা পেতে থাকবেন। তাই তাঁর ছোটবেলার ইচ্ছা পূরণের এই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাইছেন না। শামীম আখতার জানিয়েছেন, পশুদের প্রতি প্রেম থেকেই তিনি পশুদের মাংস খাওয়া বর্জন করেছেন ছোট থেকেই। তিনি নিরামিষাশী।

এমনকি পশুদের শিকল দিয়ে আটকে রাখারও তিনি ঘোর বিরোধী। তিনি এও জানিয়েছেন, এই কারণেই ছোট থেকে এখনও কোনোদিন কোন চিড়িয়াখনায় জাননি তিনি। তিনি জানিয়েছেন, এই পৃথিবীতে মানুষের যেমন স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার আছে, পশুদের কেন থাকবে না। অবলা প্রাণীগুলোকে কেন শৃংখলে আবদ্ধ করা হবে। পশুদের প্রতি আরো সহানুভূতিশীল, সচেতন মনোভাব দেখাক এই সমাজের মানুষ বলেই আবেদন রেখেছেন গবেষণারত ছাত্র শামীম আখতার মোল্লা।

Recent Posts