পুলিশের নিচুতলায় লাগাম টানতে না পারলে বাংলায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়, মন্তব্য অধীর চৌধুরীর
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: তৃণমূল ধীরে ধীরে অস্তাচলে যেতে শুরু করেছে। তৃণমূলের অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়েছে। দল আরও ভাঙবে। কলকাতা থেকে বহরমপুর যাওয়ার পথে বর্ধমানে সেচ দপ্তরের বাংলোয় সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে গেলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ অধীর চৌধুরী। আসন্ন বিধানসভা ভোট কি শান্তিপূর্ণ হবে? তার উত্তরে অধীরবাবু জানান, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। কংগ্রেসের দাবী শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের। বিজেপি নেতারা রাস্ট্রপতি শাসন জারী করার বুলি আওড়াচ্ছেন। তারাই তো কেন্দ্রে সরকারে আছেন। রাষ্ট্রপতি শাসন জারী তো করে দিতেই পারেন ভাষণ জারী না করে। জনগণকে গরম খাইয়ে লাভ নেই।
অধীরবাবু এদিন বলেন, সরকার তো তাদের। তারা তো রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করতেই পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করার আগে কয়েকটি পদক্ষেপ আছে। কংগ্রেস বিজেপির কাছে জানতে চায় – সেগুলি কি করা হয়েছে? আসলে বিজেপি নেতারা রাজনৈতিক হাওয়াবাজি করার কথা বলছে। কংগ্রেস জানতে চায় – কবে বিজেপি রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করবে ? তার আগে ভাষণ বন্ধ হোক। অধীরবাবু এদিন বলেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সত্যই উদ্বেগজনক। তার প্রমাণ গত পঞ্চায়েত ভোট। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও মনোনয়ন দাখিল করা যায়নি। রাজ্যে ২০ হাজার আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। কংগ্রেস বারবার বলেছে আইন শৃঙ্খলার অবনতির কথা। অধীরবাবু এদিন জানিয়েছেন, পুলিশ প্রশাসনের সামনেই মারধর করা হয়েছে প্রার্থীদের।
নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁরা দাবী করছেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের। কিন্তু তারাও কতটা পারবেন সেই নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ পুলিশের নিচুতলার সবাই তৃণমূলের লোক। তাদের ওপর লাগাম টানতে না পারলে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে কিছুই হবে না। স্থানীয় পুলিশে লাগাম টানা না গেলে সুষ্ট নির্বাচন সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয়বাহিনী রাজ্যপুলিশের উপর নির্ভরশীল। কেন্দ্রীয় বাহিনী ওপর ওপর করবে। একেবারে গ্রামের বুথে কি করবে? সেটাতেই কংগ্রেসের সব থেকে বড় দুশ্চিন্তা। কারণ সন্ত্রাস সেখানেই হয়।
রাজ্যের ডিজি ও মুখ্যসচীবকে কেন্দ্রর তলব নিয়ে অধীর চৌধুরী জানান, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। তাঁর মতে কেন্দ্র এইভাবে ডাকতে পারে না। তৃণমূলের ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি এদিন বলেন, যেভাবে মমতা বন্দোপাধ্যায় একদিন অন্যদল ভেঙেছেন সেটাই এখন তৃণমূলে হচ্ছে। স্বৈরাচারী একটা দল এভাবে টিকে থাকতে পারে না। তৃণমূল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। লুঠ,কাটমানী, রাহাজানি করে দল টিকে থাকতে পারেনা। তার থেকেও বড় প্রশ্ন বাংলার মানুষের অনেক সমস্যা। চাষীরা ধান বিক্রি করতে পারছে না, গ্যাসের দাম বাড়ছে – এসব বিষয় নিয়ে কেউ ভাবছে না। ভাবছে কে কোন দলে গেল তা নিয়ে। রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে হৈ চৈ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসাথী একটা বীমা প্রকল্প। সেই বীমায় কোন কোন কোম্পানি এল ও তার প্রিমিয়াম কত হল তার কোনো হিসাব আছে? পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য কাঠামো উন্নত হলে কেউ কি ব্যাঙ্গালোর যেত? কোথা থেকে এই টাকা আসছে – তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরোধিতায় কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ২২ কিমি দূরে ৩-৪ ডিগ্রী তাপমাত্রায় খোলা আকাশের নিচে কৃষকরা আন্দোলন করছে। এখনও পর্যন্ত ২০ জন কৃষক মারা গেছে। একজন আত্মহত্যা করেছে। সুপ্রীম কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কচ্ছ যাচ্ছেন – কৃষকদের নিয়ে আলোচনা করছেন, ভাষণ দিচ্ছেন অথচ দিল্লীতে তিনি কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছেন না। এটাই কি সবকা বিকাশের পরিচয় ?