পুলিশ কর্মীরা ভোটের কাজে ব্যস্ত, তাই জেলখানা থেকে আদালতে পাঠানো যাচ্ছে না বন্দিদের, রাজ্য জুড়ে আলোড়ন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুলিশ এইমুহূর্তে ভোটের কাজে নিয়োজিত, তাই বিভিন্ন জেলখানা থেকে আসামীদের নিরাপত্তা দিয়ে আদালত পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে না জেলা পুলিশ। যতদিন না ভোট প্রক্রিয়া মিটছে ততদিনই এই অচলাবস্থা চলতে থাকবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অন্তত আগামী ২ মে পর্যন্ত জেলখানায় বন্দি সমস্ত বিচারাধীন বন্দিরা বিনা বিচারেই আটকে থাকবেন জেলখানা তথা সংশোধনাগারগুলিতে। জেলার আদালতগুলিতে বিচারের জন্য ধার্য্য দিনগুলিতেও জেলা পুলিশের প্রয়োজনীয় অপ্রতুলতার কারণে হাজিরা দিতে পারবেন না বিচার প্রার্থীরা। এমনি নির্দেশ বিভিন্ন জেলার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন সংশোধনাগারে সপ্তাহ খানেক আগে এসে পৌঁছেছে বলে সূত্র মারফত খবর। আর এরপরই রীতিমত শুরু হয়ে গেছে তীব্র আলোড়ন। ইতিমধ্যেই বন্দীদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এই পরিস্থিতিতে বলে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

উল্লেখ্য, শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী লড়াই। জোরকদমে চলছে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার কাজ। কিন্তু দৃশ্যতই এই ভোটের লড়াইয়ে বলি এখন জেলখানা বা সংশোধনাগারগুলিতে আটক বন্দিরা। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান এবং বীরভূম জেলার পুলিশ প্রশাসন নাকি বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সুপার আশীষ বণিককে চিঠি দিয়ে তাঁদের এই ফোর্স দিতে না পারার অপারগতা জানিয়েছেন। আশীষবাবু জানিয়েছেন, জেলা পুলিশ কর্মীরা যেহেতু এখন ভোটের কাজে নিযুক্ত তাই বাইরের জেলখানা থেকে আগত বন্দিদের আদালতে হাজির করার জন্য প্রয়োজনীয় ফোর্স তাঁরা এখন দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। যদিও লোকাল প্রোডাকশান বা বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান আদালতে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ কর্মীকে এখনো বহাল করা হচ্ছে।

আশীষবাবু জানিয়েছেন, নির্দেশ অনুসারে ভোট না মেটা পর্যন্ত এই অসুবিধা চলতে থাকবে। তিনি জানিয়েছেন, যেহেতু এটা বর্ধমানে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার, তাই এই সংশোধনাগারের অধীনে রয়েছে বর্ধমানের কালনা, কাটোয়া মহকুমা জেলখানা ছাড়াও, আসানসোল, দুর্গাপুর, রামপুরহাট, সিউড়ি, বোলপুর, আরামবাগ জেলখানাও। কিন্তু এই নির্দেশিকার জেরে এখন বাইরের জেলখানায় থাকা বন্দিদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। এদিকে, এদিন আদালতে জেলখানায় যে সমস্ত কাষ্টডি ট্রায়ালের আসামী তথা বন্দিরা রয়েছেন পুলিশ কর্মীর অভাবে তাঁদের আদালতে হাজির করতে না পারার ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন আইনজীবীরা।

বর্ধমান আদালতের আইনজীবী রমেশ সিং জানিয়েছেন, পুলিশ কর্মীদের অভাবের জন্য কেন আসামীরা বিচার পাবেন না। নির্বাচনের জন্য পুলিশ কর্মীরা ব্যস্ত থাকায় বন্দিদের মৌলিক অধিকার ব্যাহত হচ্ছে এই কারণে। এব্যাপারে এদিন বিচারকদের কাছে বিষয়টি জানানোর পর বন্দিদের আদালতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে বর্ধমানে এই ব্যবস্থা আপাতত এখনো সচল থাকলেও, অন্যান্য জেলার বন্দীদের সেই সমস্ত জেলার আদালতে হাজির করার বিষয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা বর্ধমান সংশোধনাগারে ইতিমধ্যেই এসে গেছে। আর তাই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিচারপ্রার্থীদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।