ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশংকায় এবং বিক্ষিপ্ত গোষ্ঠী সংক্রমণ মোকাবিলায় এবার চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এবং শনিবার রাজ্য জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করলো স্বরাষ্ট্র সচিব। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহের বুধবার রাজ্য জুড়ে লকডাউন থাকবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে সমস্ত ব্যাংক সপ্তাহে পাঁচ দিন খোলা রাখা যাবে। শনি ও রবিবার সম্পুর্ন বন্ধ থাকবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করেছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, ১জুলাই পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৬জন। ১৯ দিনে সেই সংখ্যা পৌঁছেছে ৪১৩ তে। অর্থাৎ এই কদিনে গড়ে প্রায় ২২ জনের ওপরে ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন প্রতিদিন। এর মধ্যে কেবলমাত্র বর্ধমান শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ জন। যদিও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী এই কদিনের রেকর্ড ভেঙে সোমবার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ জন। যা রীতিমত আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি সোমবার পর্যন্ত জেলায় সক্রিয় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৪৩ জন। আর এরপরই রীতিমত দাবি উঠেছে জেলা জুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করার।
অন্যদিকে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথেই প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যাও। রবিবার পর্যন্ত যেখানে জেলায় মোট কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ছিল ৮০ টি, সেখানে সোমবার একলাফে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১১৮ টিতে। অর্থাৎ গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ৩৮টি কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই লাগামছাড়া এই সংক্রমণের দাপটে নতুন করে তীব্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে জেলা জুড়ে।
এই আতঙ্কের অন্যতম কারণ, এতদিন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে এই সংক্রমণের প্রকোপ দেখা গেলেও, এবার সাধারণ মানুষ যাঁদের গত কয়েকমাসে শহরের বাইরে যাওয়ার কোনো রেকর্ড নেই – তাঁরাও এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনকি জেলা পুলিশের পদস্থ আধিকারিক এবং তাঁদের পরিবার, বিভিন্ন থানার ওসি থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স কেউ এই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। প্রশাসন একপ্রকার দিশেহারা। ইতিমধ্যেই বর্ধমান শহর তথা জেলার সাধারণ নাগরিককে কিভাবে এই সংক্রমণের প্রকোপ থেকে রক্ষা করা যায় তার জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলার কালনা, কাটোয়া সহ খোদ বর্ধমান পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ড কে সম্পূর্ণ লকডাউন এর আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা খোসবাগান কে কন্টেনমেন্ট জোনের ঘেরাটোপে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বর্ধমানের উল্লাস মোড় থেকে নবাবহাট পর্যন্ত জিটি রোড বরাবর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলির খোলা রাখার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বিসি রোড, বিসি রোড থেকে স্টেশন রোড সহ জিটি রোডের দুদিকের দোকান বা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম জারি করেছে প্রশাসন।
যদিও এই ব্যবস্থায় ব্যবসায়ী মহলে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। এমনকি শহরের অনেক ব্যবসাদার রীতিমত প্রশ্ন তুলেছেন ‘একদিন একদিক খোলা একদিক বন্ধ, পরেরদিন আরেকদিক খোলা অন্যদিক বন্ধ’ এই নিয়ম নিয়ে। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ রুখতে অবিলম্বে সম্পূর্ণ লকডাউন করে দেওয়া উচিত প্রশাসনের। পাশাপাশি কলকাতা থেকে বর্ধমানগামী সমস্ত বাস পরিষেবা অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, লকডাউন নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলাশাসক বিজয় ভারতী বিজ্ঞপ্তি জারী করেছেন। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে শহরের বেশ কিছু মার্কেটকেও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যদিও খোদ বর্ধমান শহরের বিসি রোডের দুপাশের দোকান একদিন অন্তর একদিন খোলা রাখার নিয়মকে ঘিরে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। বর্ধমানের দুটি ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এব্যাপারে কোনো আলোচনা ছাড়াই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। এর ফলে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
বিসিরোডের একাধিক দোকানদার জানিয়েছেন, কোনো কোনো সংগঠনের সদস্যরা এসে বলছেন তাঁকে আগামী এক সপ্তাহে সোম, বুধ, শুক্র খুলতে হবে, আবার একজন এসে বলছেন তাঁকে মঙ্গল, বৃহস্পতিবার ও শনিবার খুলতে হবে। এর ফলে তাঁরা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। যদিও এব্যাপারে বর্ধমান থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কোনো বিভ্রান্তি নেই। কোন দিন কোন দিক খোলা থাকবে তা প্রশাসনিকভাবেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এব্যাপারে মাইকিং করা হচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়েছেন, কোনো ব্যবসায়ীক সংগঠনকেই এব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।