ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: জোর যার মুলুক তার – এই প্রবাদ বাক্যই চলতি করোনা আবহের সময় জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে মেমারী ১ নং ব্লকের চোতখণ্ড থেকে দেবীপুর মোড় পর্যন্ত ২নং জাতীয় সড়কের দুধার বরাবর। মার্চ মাস থেকে দেশ জুড়ে করোনার জেরে লকডাউন এবং তার পরবর্তী সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রাণ হাতে করে বাড়ি ফিরে আসার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরকারী ঘোষণাকেও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এই এলাকার হটাৎ তৈরি হওয়া পরিস্থিতি।
ডানকুনি থেকে পানগড় যাবার রাস্তার ২নং জাতীয় সড়কের পূর্ব বর্ধমান জেলার চোৎখণ্ড থেকে দেবীপুর মোড় পর্যন্ত দুধারে রাস্তার জমি হৈ হৈ করে দখল করা শুরু হয়েছে। তৈরী হচ্ছে স্থায়ী অস্থায়ী কাঠামো। রীতিমত ঢালাই করে তৈরী করা হয়েছে জাতীয় সড়কের জায়গায় দোকানঘর। এমনকি রাস্তার দুধারে দখলদারদের জায়গা চিহ্নিতকরণের জন্য কয়েক কিলোমিটার জুড়ে রাস্তার দুদিকেই লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে দড়ির বেড়া। আর এই ঘটনার পিছনে রীতিমত
মদতের অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের একাংশের বিরুদ্ধে।
কিভাবে ২নং জাতীয় সড়কের জায়গা এভাবে দখল হয়ে দোকানঘর তৈরী করা হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমত বিস্মিত এলাকার মানুষজন। বিশেষত, পানাগড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত এই ২নং জাতীয় সড়ককেই ফোর লেন থেকে সিক্স লেনে পরিণত করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। পানাগড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত প্রায় ৭৭ কিমি পূর্ব বর্ধমান জেলার অধীনে থাকা রাস্তার মধ্যে মাত্র সাড়ে ৫ একর জায়গা অধিগ্রহণের কাজ বাকি রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেই কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) শশী কুমার চৌধুরী।
স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে কিভাবে সরকারী জমিই শুধু নয় রীতিমত সদা ব্যস্ত, দ্রুতগামী রাস্তার দুধারের জায়গা গায়ের জোরে হৈ হৈ করে দখল হয়ে গেল তা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় রীতিমত প্রতিবাদ করেছেন এই সরকারী জমির পরেই যে সমস্ত চাষের জমি রয়েছে তার মালিকরা। ইতিমধ্যেই এই মালিকদের একটা অংশ দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে তাঁদের প্রতিবাদপত্র দিয়ে সুরাহা চেয়েছেন।
চোৎখণ্ডের বাসিন্দা জমির মালিক সুশান্ত মণ্ডল জানিয়েছেন, হঠাই তিনি জানতে পারেন তাঁর জমির সামনে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে। এরফলে তিনি তাঁর জমিতে যেতে পারবেন না। এমনকি জমিতে মেশিনও তিনি নামানোর কোনো রাস্তা পাবেন না। ভবিষ্যতে যদি তিনি তাঁর জমিতে কিছু করতে চান তাও করতে পারবেন না। কারণ তাঁর জমির সামনেটা গোটাটাই দখল হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, রীতিমত গায়ের জোরে কিছু মানুষ এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন।
শুধু সুশান্তবাবুই নয় চোৎখণ্ড থেকে দেবীপুর মোড় পর্যন্ত এই বিশাল এলাকার দুপাশের জমির মালিকরাই এখন রীতিমত আতংকিত হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে, স্থানীয় শোভনা গ্রামের বাসিন্দা সেখ সাবির অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনের জেরে বাড়িতেই বসে রয়েছেন। কোনো কাজকর্ম নেই। তাই রাস্তার পাশের এই জায়গায় দোকানঘর করছেন। তিনি জানিয়েছেন, সরকার থেকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে তিনি একবার চাল আর ছোলা পেয়েছিলেন।পঞ্চায়েত থেকে জবকার্ড করে দেবার কথা বলেছে – কিন্তু এখনও কিছু পাননি। সাবির জানিয়েছেন, এই জায়গা যাঁরা দখল করছে প্রায় প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। কিছু গ্রামের অন্য মানুষও রয়েছেন।
এদিকে, এই ঘটনা সম্পর্কে দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিখা রায় স্বীকার করেছেন ঘটনার সত্যতা। তিনি জানিয়েছেন, প্রায় ৫ মাস আগে এই ধরণের ঘটনার সূত্রপাত। একজন রীতিমত পাকা দোকানঘর তৈরী করছিলেন এই জাতীয় সড়কের ধারে। বিষয়টি নিয়ে তিনি পূর্ত দপ্তর এবং মেমারী থানাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনিও স্বীকার করেছেন, এভাবে ২নং জাতীয় সড়কের ধারে জায়গা দখল করে দোকানঘর করায় দুর্ঘটনার আশংকা বাড়বে।
তিনি জানিয়েছেন, ফের তিনি মেমারি থানা এবং পূর্ত দপ্তরকে জানাচ্ছেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে কিছুই জানা নেই বলে জানিয়েছেন, বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমা শাসক সুদীপ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, এরকম কোনো ঘটনার কথা তিনি শোনেনি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই ঘটনার বিষয়ে শুনেছেন। এরপর খোঁজ নিয়ে দেখবেন।