পূর্ব বর্ধমানে লকডাউন শিথিল হতেই স্বমহিমায় ফিরছে জেলায় অপরাধের সংখ্যা

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষত লকডাউনের জেরে সিংহভাগ মানুষ ঘরবন্দি থাকায় যেমন সামাজিক বিভিন্ন অপরাধ কমেছিল – তেমনি লকডাউন একপ্রকার শিথিল হতেই ফের পূর্ব বর্ধমান জেলায় বাড়তে শুরু করে দিল বিভিন্ন অপরাধের সংখ্যা। পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে, পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে অস্বাভাবিক হারে অন্যান্য অপরাধের ঘটনা কমলেও, মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগ বেড়েছিল।
অনেকেই মনে করছেন লকডাউনের জেরে সকলেই ঘরবন্দি থাকায় এই মহিলা নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছিল। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারী মাসে জেলায় মোট মহিলা নির্যাতন সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছিল ১৫২টি। ফেব্রুয়ারী মাসে ১৭২টি এবং মার্চ মাসে ১৭৭টি। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারী মাসেও যেখানে জেলায় চুরির ঘটনা ছিল ৩৭টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা কমে দাঁড়ায় ২৭টিতে এবং মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩টিতে। এমনকি এই তিন মাসে রীতিমত কমেছে খুনের ঘটনাও। জেলায় জানুয়ারী মাসে যেখানে খুনের ঘটনা ঘটেছিল ৬টি, ফেব্রুয়ারী মাসে তা হয় ৪টি এবং মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৩টিতে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারী মাসে জেলায় মোট অপরাধজনিত ঘটনা ঘটেছিল ৭৩০টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫৮টিতে এবং মার্চ মাসে তা কমে দাঁড়ায় ৬৭৮টিতে। অপরাধজনিত বা দুর্ঘটনাজনিত ঘটনাও এই সময়কালে রীতিমত কমেছে। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য খাতে জানুয়ারী মাসে মোট ঘটনা ছিল ৫২৪টি। ফেব্রুয়ারী মাসে তা কিছুটা বেড়ে ৫৫১টি হলেও মার্চ মাসে কমে দাঁড়ায় ৪৭০টিতে। কার্যত লকডাউন উঠে যেতেই ফের স্বমহিমায় ফিরতে চলেছে জেলায় অপরাধের সংখ্যা। আশঙ্কার বিষয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা দ্বিগুণও হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মে মাসে জেলায় মোট অপরাধ ও বিভিন্ন ঘটনা সহ মোট ৩৭১টি ঘটনা নথীভুক্ত হয়েছিল জেলায়। যার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটেছে ১২টি। খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩টি, মহিলা নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৭৩টি, সংঘর্ষজনিত ঘটনা ঘটেছে ১টি, অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে ২৮১টি। মে মাসে জেলায় একটি ডাকাতি, রাবারি বা বাগলারির একটিও ঘটনা ঘটেনি। এদিকে, মে মাসের পর জুন মাসে ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে এই সমস্ত অপরাধের সংখ্যা। জুন মাসেও এই জেলায় ডাকাতি, রাবারি বা বাগলারির একটি ঘটনা না ঘটলেও চুরির ঘটনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০টিতে।
সূত্রের খবর, শুধু জুন মাসেই জেলায় খুনের ঘটনা ঘটেছে ৭টি। মহিলা নির্যাতনের ঘটনা রীতিমত প্রায় দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫২টিতে। সংঘর্ষজনিত ঘটনা ঘটেছে ২টি এবং অন্যান্য ঘটনা ঘটেছে ৪৫০টি। এই জুন মাসে মোট অপরাধ ও বিভিন্ন ঘটনার মোট সংখ্যা জেলায় ৬৩১টি। পুলিশ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা মনে করছেন, করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে যেমন মানুষ ঘরবন্দি হওয়ায় চুরি, ডাকাতি, পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা রীতিমত কমে গেছিল তেমনি লকডাউন উঠতেই ফের ঘর ছেড়ে পথে বেরোতে শুরু করেছে মানুষ।
ফলে নতুন করে আবার অপরাধের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, জুন মাসের পাশাপাশি চলতি জুলাই মাসের প্রথমেই জেলায় পরপর ৩টি নৃশংস্য খুনের ঘটনা ঘটেছে। বর্ধমানের রায়ান গ্রামে, বর্ধমান শহরের তেজগঞ্জ এলাকায় এবং মেমারীতে খুনের ঘটনার মধ্যে রায়ান এবং মেমারীতে মূল খুনীরা গ্রেপ্তার হলেও এখনও শহরের তেজগঞ্জ এলাকায় বৃদ্ধ খুনের ঘটনায় কোনো গ্রেপ্তারের খবর মেলেনি। যদিও ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তে সিআইডির ফিঙ্গার প্রিন্ট বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। পুলিশ কুকুর নিয়েও তল্লাশি চালানো হয়েছে। জেলা পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন খুব শীঘ্রই এই খুনের ঘটনায় অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ব্যাপক হারে জেলায় অপরাধ বেড়েছে এটা ঠিক নয়। লকডাউনের পর্বে এবং লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আপাতভাবে অপরাধের হার কমবেশি মনে হলেও আসলে অপরাধের হার তেমন ব্যাপক হারে বাড়েনি। তবে বেশ কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে খুনির বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এব্যাপারে মনোবিদদের পরামর্শও নেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জেলার সমস্ত অপরাধের তদন্ত চলছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কয়েকটি কেসের তদন্ত চলছে । খুব শীঘ্রই সেইসব কেসের পর্দা তোলা যাবে।

আরো পড়ুন