এদিন জেলাশাসক জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ ডিভিসি থেকে প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়ার পাশাপাশি তাঁদের জানানো হয় ধাপে ধাপে এই জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। বিকেল নাগাদ তা ১ লক্ষ ৫০ থেকে ৭০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত জল ছাড়া হতে পারে বলে জানানো হয়। কিন্তু এদিন দুপুর থেকেই জল ছাড়ার পরিমাণ কমানো হয়েছে। দুপুর ১টা নাগাদ ১ লক্ষ ১৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে কিছুটা স্বস্তি পেলেও পরিস্থিতির ওপর সর্বদা নজর রাখা হয়েছে। বিশেষত, দামাদরের জলে প্লাবিত হবার আশংকায় থাকা গলসী ১ ও ২-এর কিছু এলাকা এবং খণ্ডঘোষের কিছু এলাকা সহ রায়না ২ ও জামালপুর ব্লকে দামোদর তীরবর্তী মানুষদের প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে যাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।
এদিকে, গত কয়েকদিনের একটানা বৃষ্টির জেরে গোটা জেলায় জল জমে জলবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। এমনকি লক্ষাধিক হেক্টর চাষের জমির ক্ষতি হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের এই একটানা বৃষ্টির জেরে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত ৮০টি কাঁচা বাড়ির সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০০টি বাড়ির। তিনি জানিয়েছেন, জলবন্দি হয়ে পড়ায় গোটা জেলায় প্রায় ৪০০০ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। যার মধ্যে কেবলমাত্র বর্ধমান পুর এলাকাতেই ২০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন, দুর্গতদের পানীয় জল, শুকনো খাবার এবং ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে প্রয়োজনমত। কোথাও কোনো অসুবিধা নেই। তিনি জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থানীয় বিডিওরাই দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ করছেন। এছাড়াও পুরসভাগুলিও সহায়তা করছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ীই ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে দুর্গতদের। এদিকে, এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত সরকারী হিসাবে কোনো মৃত্যুর খবর নেই। অপরদিকে, গোটা জেলায় ব্যাপকভাবেই একটানা বৃষ্টির জেরে ক্ষতির মুখে চাষীরা।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত বৃষ্টির জমা জলে গোটা জেলায় প্রায় ১০২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং প্রায় ৯০০ মৌজা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৩৫০ হেক্টর সব্জী চাষের জমিও রয়েছে। বাকি সব জমিই আমন ধানের বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জল নেমে যাবার পর ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হবে। উল্লেখ্য, চাষীরা জানিয়েছেন, যাঁরা আগেই রোয়ার কাজ করে ফেলেছিলেন। টানা বৃষ্টির জেরে সমস্ত জমিই এখন জলের তলায়। ফলে সেই রোয়া ধান পুরোপুরিই পচে নষ্ট হবার আশংকা করছেন তাঁরা। এমনকি এরপর ফের চাষ কিভাবে হবে এবং দেরী করে ধান রোয়ার কাজ করলে আখেরে উৎপাদন কি হবে তা নিয়েও তাঁরা আশংকায় দুলছেন।